অযোধ্যা : হাতে আর কয়েক ঘণ্টা। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রাম মন্দিরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে প্রাণ-প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান। আর তার আগে শেষ হয়ে গেল ৫০০ বছরের পুরনো শপথ। উত্তরপ্রদেশের এই অংশে থাকা সূর্যবংশী ঠাকুররা অবসান ঘটালেন পুরনো সেই অঙ্গীকার।


প্রায় ৫০০ বছর পর পাগড়ি পরলেন অযোধ্যার সরাইরাসি গ্রামের সূর্যবংশী ঠাকুররা। রাম মন্দিরের প্রাণ-প্রতিষ্ঠার আগে তাঁরা মাথায় তুলে নিলেন পাগড়ি। 


 






কী সেই অঙ্গীকার ?


উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা ও তার পড়শি বস্তি জেলায় সূরযূ নদীর উভয় তীরে রয়েছে প্রায় ১১৫টি গ্রাম। এখানকার সূর্যবংশী ঠাকুররা হিন্দু দেবতা রামের বংশধর বলে থাকেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের প্রায় ৯০ হাজার পূর্বপুরুষ প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি নাকি রামের জন্মস্থানে একটি প্রাচীন রাম মন্দির কামান দেগে ভেঙে ফেলেন এবং সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করেন, যা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তার প্রতিবাদেই যুদ্ধে নামেন সূর্যবংশী ঠাকুররা।


তাঁদের দেবতার বাসস্থান ভেঙে ফেলায়, সেই সম্প্রদায়ের লোকেরা মুঘল সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাঁরা তাঁদের কুলদেবতা সূর্যকে উৎসর্গ করে তৈরি একটি পুকুর ও মন্দির সূর্য কুণ্ডয় জড়ো হন। সেখানে তাঁরা শপথ নেন, যতক্ষণ না রামজন্মভূমি 'স্বাধীন' করা যাচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা পাগড়ি বা চামড়ার জুতো পরবেন না। এমনকী ছাতাও ব্যবহার করবেন না। বাকি যেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে একটি মন্দির পুনরায় গঠন না করা হলে, তাঁরা উপরের জিনিসগুলি থেকে বিরত থাকবেন।


মীর বাকি ১৫২৮-১৫২৯ সাল নাগাদ বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। যা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কর সেবকরা ভেঙে ফেলেন। দীর্ঘদিনের বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্কের জেরে। সেই আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছিল বিজেপি। তারা বিতর্কিত ওই জায়গায় মন্দির দাবি করেছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জায়গা হিন্দুদের। এইভাবেই সেই জায়গায় একটি মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্থ হয়। নব নির্মিত মন্দিরে এবার রাম লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ বছরের পুরনো সেই শপথ তুলে নিয়ে রাজপুতানার অহঙ্কার স্বরূপ মাথায় পাগড়ি তুলে নেন সূর্যবংশী ঠাকুররা।