আগরতলা : বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায় ( Tripura ) রয়েছে একান্নপীঠের ( Sati Pith ) এক পীঠ, দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর মন্দির। কথিত আছে, সতীর ডান পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এখানে। ত্রিপুরা সুন্দরীর মন্দির মাতাবাড়ি নামেও পরিচিত।
কেমন দেখতে এই দেবীমূর্তি?
ত্রিপুরার মহারাজা ধন্য মাণিক্য ১৫০১ খৃস্টাব্দে ত্রিপুর সুন্দরীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, দেবী ত্রিপুর সুন্দরীর নামেই রাজ্যের নাম ত্রিপুরা। রাজধানী আগরতলা থেকে সড়কপথে ৫৬ কিলোমিটার গেলে গোমতী জেলায় মিলবে এই সুপ্রাচীন মন্দির, যা উদয়পুর মহকুমায় অবস্থিত। কষ্টি পাথরে তৈরি ষোড়শী কালীমূর্তি।
ত্রিপুরার সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, এই পীঠস্থানটি কূর্ম পীঠ নামে পরিচিত । এখানে দেবী মন্দিরের আকৃতি কচ্ছপের মতো। মন্দিরের কাঠামোটিকে এক ঝলকে দেখলে মনে হবে যেন একটি বৌদ্ধ স্তূপ ! এই মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের স্থাপত্যে, বাংলার "চার চালা" মন্দিরের স্থাপত্যের প্রভাব স্পষ্ট।
এই মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে কল্যাণ সাগর নামেএকটি হ্রদ। সেখানে খেলা করে বেড়ায় বড় বড় মাছ এবং কচ্ছপ । মন্দিরটি উদয়পুর শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
কথিত আছে, রাজা ধন্য মাণিক্য স্বপ্নাদেশ পেয়ে চট্টগ্রামের সদর ঘাটের একটি বটগাছের নিচে থেকে দেবীকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসেন। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ত্রিপুরার তৎকালীন রানি কাঞ্চন প্রভা দেবীর শর্ত মেনে, আজও সরকারই এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। তবে পুজোর অর্ঘ্য থেকে আহুতি এখনও সব কিছুই হয় রাজপরিবারের বর্তমান প্রতিনিধি প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মনের নামে। রীতিমতো ধুমধাম করে কালীপুজো হয় এখানে। দূর-দূরান্ত থেকে পুজো দিতে আসেন ভক্তরা।
সতীপীঠ কাকে বলে ?
দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে যাবার জন্য শিবের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন সতী। শিব বলেছিলেন, বিনা আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতী মহাদেবকে বিয়ে করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন দক্ষ। আর সেজন্য মহাদেব ও সতী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী উপস্থিত হন। তবে আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় যথাযোগ্য সম্মান পাননি সতী। মহাদেবকেও অপমান করেন দক্ষ। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন সতী। ক্রোধে, শোকে জ্বলে ওঠেন শিব। শেষমেষ বিষ্ণুর বুদ্ধিতে রক্ষা পায় জগত। সুদর্শন চক্রে সতীর দেহকে একান্ন টুকরো করেন নারায়ণ। যে সব জায়গায় সেই দেহখণ্ডগুলি পড়েছিল, সেগুলিই হল এক-একটি পীঠ।
আরও পড়ুন :