আদ্যা স্তব অনুযায়ী, ওড়িশায় দুটি শক্তিপীঠ। বিমলা পীঠ ও বিরজা পীঠ। কারণ ওড়িশাকে পুরুষোত্তম ক্ষেত্র, ঔড্রদেশ নামে ডাকা হয়। সমগ্র উৎকল ক্ষেত্র চারটি ভাগে বিভক্ত। সাতপুরা বা বিরজা ক্ষেত্র, ভুবনেশ্বর বা শাম্ভব ক্ষেত্র, কোণারকের পদ্ম ক্ষেত্র এবং পুরীর জগন্নাথ ক্ষেত্র। 


দেবীর বিরজার রূপ কেমন


প্রায় প্রতিটি পীঠ শাস্ত্রে বিরজা দেবীর নাম পাওয়া যায়।  পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে এখানে দেবীর নাভি পড়েছিল। এটি একাদশ তম সতীপীঠ। মন্দিরের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে, সোজা তাকালে একটা আলোকবিন্দু চোখে পড়ে। এটি মা বিরজার কপালের হিরের টিপ,  ঔজ্জ্বল্য এতটাই যে, গর্ভগৃহের ভিতরে থাকা মা বিরজাকে বাইরে থেকে দেখা না গেলেও, এই হীরক খণ্ডের দ্যুতি বাইরে থেকেও চোখে পড়ে। এখানে মা বিরজা রত্নবেদিতে আসীন। দ্বিভূজা দেবী, সিংহবাহিনী। এক হাতে শূল ও অন্য হাতে মহিষরূপী অসুরের লেজ ধরে আছেন। 


সতীর কোন দেহাংশ পড়েছিল


মহাভারতের বন পর্বেও বৈতরণীর তীরে বিরজা ক্ষেত্রের উল্লেখ রয়েছে। তন্ত্রমতে বলা হয়, এখানে যজ্ঞবেদিতে সতীর দেহাংশের নাভি মণ্ডল পড়েছিল। তারপর যজ্ঞবেদিটি ভাসমান অবস্থায় পুরীতে পৌঁছয়। সেখানে যজ্ঞ বেদিটি ডুবে গেলে সমুদ্রে ভেসে বেড়ায় নাভিটি। কলিঙ্গ রাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদেশে নাভিটি সংগ্রহ করেন এবং জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের অন্তরে স্থাপন করেন। এটি জগন্নাথের তীর্থবস্তু। আজও গোপনে এই তীর্থসম্পদ, জগন্নাথের নবকলেবরের সময় স্থানান্তরিত করা হয়।   


জগন্নাথই বিরজা দেবির ভৈরব


বিরজা দেবির ভৈরব হিসেবে জগন্নাথ দেবকেই উল্লেখ করা আছে। যদিও বিরজা ক্ষেত্রে ১০৮ শিব উপস্থিত, তাও জগন্নাথ দেবকেই এই পীঠের ভৈরব বলে মানা হয়। বিরজা দেবী এখানে লক্ষ্মীরূপে অধিষ্ঠিতা।  জাজপুর স্টেশনে নেমে যেতে হয় বিরজা ক্ষেত্রে।  


সতীপীঠ কাকে বলে ?


দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে যাবার জন্য শিবের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন সতী। শিব বলেছিলেন, বিনা আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সতী মহাদেবকে বিয়ে করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন দক্ষ। আর সেজন্য মহাদেব ও সতী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী উপস্থিত হন। তবে আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় যথাযোগ্য সম্মান পাননি সতী। মহাদেবকেও অপমান করেন দক্ষ। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন সতী। ক্রোধে, শোকে জ্বলে ওঠেন শিব।  শেষমেষ বিষ্ণুর বুদ্ধিতে রক্ষা পায় জগত। সুদর্শন চক্রে সতীর দেহকে একান্ন টুকরো করেন নারায়ণ। যে সব জায়গায় সেই দেহখণ্ডগুলি পড়েছিল, সেগুলিই হল এক-একটি পীঠ। 


আরও পড়ুন : পড়েছিল সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র, এখানে পাপস্খালন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র, পড়ুন মরুতীর্থ হিংলাজ কথা