মকর সংক্রান্তি তিথি হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর পৌরাণিক গুরুত্বও অসীম, সেই সঙ্গে জ্যোতিষশাস্ত্রের দিক থেকেও এর তাৎপর্য অনেক। জ্যোতিষ শাস্ত্র বলে, এদিন পুত্র শনির গৃহে প্রবেশ করেন সূর্য। শনিদেব, সূর্যদেবতার পুত্র। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী,মকর সংক্রান্তিতেই শনিদেব কালো তিল দিয়ে পিতৃদেব সূর্যের পুজো করেন। শনির পুজোয় প্রসন্ন সূর্য আশীর্বাদ করেন তাঁকে। আশীর্বাদে তিনি বলেন, শনির অপর ঘর মকরে যখন সূর্য প্রবেশ করবেন সেদিন মর্ত্য লোক ভরে যাবে ধন-ধান্যে। সূর্যের মকরে প্রবেশ করার তিথিই মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। এদিন সমৃদ্ধি উদযাপনের দিন।
সারা বছরে মোট ১২ টি সংক্রান্তি আছে, তবে মকর সংক্রান্তির গুরুত্বই আলাদা। পৌষ মাসে, যখন সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে, সেই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। এটি সূর্য ও শনির মিলনের দিন। কথিত আছে যে এই দিনে কালো তিল দিয়ে সূর্যের পুজো করলে কোনও ব্যক্তি শনির দোষ থেকে মুক্তি পান।
মকর সংক্রান্তির গল্প
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সূর্যদেব এবং শনিদেবের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গিয়েছিল। শনির মা ছায়ার সঙ্গে সূর্যের দূরত্ব তৈরি হয়। প্রতি কাহিনিতে বর্ণিত, শনিদেবের জন্মের পর সূর্ দেখেন, শনির গায়েক রং কালো। তা দেখে তিনি বলেন, শনি তাঁর পুত্র হতে পারবেন না। তিনি শনিকে নিজের পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেননি । তাতে রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেন ছায়া। সূর্যের এই আচরণে আঘাত পেয়ে ছায়া তাঁকে কুষ্ঠ রোগ হবে বলে অভিশাপ দেন। শনিদেব ও মাতা ছায়া কুম্ভ-গৃহে বসবাস শুরু করেন।
ছায়ার অভিশাপে সূর্যের কঠিন অসুখ হয়। তা দেখে সূর্যপুত্র যমরাজ খুবই দুঃখিত হলেন। যমরাজ সূর্যের প্রথম স্ত্রী সংজ্ঞার সন্তান। যমরাজ সূর্যদেবকে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি দেন। যখন সূর্যদেব সুস্থ হয়ে উঠলেন, তখন তিনি তাঁর দৃষ্টি সম্পূর্ণরূপে কুম্ভ রাশির দিকে নিবদ্ধ করলেন। এতে শনিদেবের ঘর কুম্ভ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর পর শনি ও তার মা ছায়া পড়েন মহা বিপদে।
এরপর ছায়া-মা এবং ভাই শনির দুর্দশা দেখে, যমরাজ পিতা সূর্যকে তাঁদের ক্ষমা করার অনুরোধ করেন। এর পর সূর্যদেব শনির সঙ্গে দেখা করতে যান। শনিদেব তাঁর পিতাকে কালো তিল নিবেদন করে স্বাগত জানান । ভগবান সূর্য শনির এই আচরণে খুশি হন এবং শনিদেবকে দ্বিতীয় আশ্রয় দেন, যার নাম মকর। এতে খুশি হয়ে শনিদেব বলেন, যে ব্যক্তি মকর সংক্রান্তিতে সূর্যের পুজো করবে সে শনির মহাদশা থেকে মুক্তি পাবে এবং তার ঘর ধন-সম্পদে ভরে যাবে।