শীতলা অষ্টমী ২০২৫:  শীতলা অষ্টমী। বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয় এই ব্রত। সন্তানের মঙ্গলকামনায়  চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম দিনে এই ব্রতপালন হয়। এর সঙ্গে জুড়ে আছে সন্তানের ভাল চাওয়া, পরিবারকে সুস্থ রাখা, সংসারে শান্তি বজায় রাখার প্রার্থনা। মন্দিরে মন্দিরে মা শীতলার পুজো যেমন হয়। তেমনই ঘরে ঘরে পালিত হয় অরন্ধন ব্রত। এদিন ঘরে ঘরে শীতল অর্থাৎ ঠান্ডা খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে। গুটি বসন্তের ত্রাতা হিসাবেই শীতলার দেবীর পুজো ও ব্রতের প্রচলন। তাঁকে সকলে অর্চনা করেন ‘বসন্তের দেবী’ হিসেবে। পরে এই মরসুমের বিভিন্ন রোগ যেমন কলেরা, প্লেগ ইত্যাদি থেকে মুক্তি কামনাতেও মানুষ শরণাপন্ন হয়েছেন দেবীর।


শীতলা অষ্টমী কবে?


চৈত্র মাসে শীতলা মায়ের পুজো হবে  সপ্তমী তিথি  ২১ মার্চ এবং অষ্টমী তিথি ২২ মার্চে। এদিন  ব্রত-উপবাস পালন করা হবে।  এই ব্রতে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার প্রথা রয়েছে। যারা এই ব্রত পালন করে, তারা একদিন আগে তৈরি করা খাবারই খায়। আগের দিন রাতে রান্না করে রাখা হয়। 


কেন ঠান্ডা খাবার খাওয়া হয়?


মানুষের বিশ্বাস,  মা শীতলার পুজো করলে গুটিবসন্ত, হাম-পক্স, ইত্যাদি রোগের থাবা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।  এছাড়া জীবনের নানা সঙ্কটেও ঢাল হয়ে দাঁড়ান দেবী। নানারকম  কষ্ট থেকে মুক্তি দেন মা-শীতলা। মা শীতলার হাতে থাকে ঝাড়ু। গৃহস্থর ঘর থেকে অশুভ সব কিছু দূর করার চিহ্নই হল এই ঝাড়ু। দারিদ্রের সরিয়ে দেবী নিয়ে আসেন সমৃদ্ধি। 


চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই মূলত ব্রত পালিত হয়। সাধারণত এটি হোলির আট দিন পর পড়ে । তবে অনেকে আবার  হোলির পর প্রথম সোমবার বা শুক্রবার ব্রত  পালন করে।


কোথায় পালিত হয় শীতলা অষ্টমী?


 শীতলা অষ্টমী বাংলায় তো বটেই,  উত্তর ভারতের বিভিন্ন  রাজ্য যেমন গুজরাত, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশে বেশি প্রচলিত।  রাজস্থান রাজ্যে শীতলা অষ্টমী উৎসব  ধুমধাম করে পালিত হয়। এই উপলক্ষে মেলা এবং লোকসংগীতের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়।  বিশ্বাস করা হয় যে এই নির্দিষ্ট দিনে ব্রত রাখলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


শীতলা পূজার গুরুত্ব


শিশুদের রোগ থেকে দূরে রাখার জন্য এবং তাদের কল্যাণের জন্য এই উৎসব পালনের প্রথা বহু বছর ধরে চলে আসছে। এই দিনে  দেবীকে ঠান্ডা জিনিস দেওয়ারই রীতি রয়েছে । মা শীতলার উল্লেখ প্রথম স্কন্দ পুরাণে পাওয়া যায়। শান্ত , স্নিগ্ধ চেহারা এবং কষ্ট-রোগ নাশকারী তিনি। গাধা তাঁর বাহন।  হাতে কলস,  ঝাড়ু এবং নিমপাতা রয়েছে। 


শীতলা সপ্তমী এবং অষ্টমী


কিছু জায়গায় শীতলা মাতার পূজা চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে এবং কিছু জায়গায় অষ্টমী তিথিতে হয়। সপ্তমী তিথির অধিপতি সূর্য এবং অষ্টমীর দেবতা শিব। উভয়েই উগ্র দেব হওয়ায় এই দুটি তিথিতে শীতলা মাতার পূজা করা যায়। নির্ণয় সিন্ধু গ্রন্থ অনুযায়ী এই ব্রতে সূর্যোদয় ব্যাপিনী তিথি নেওয়া হয়।


শীতলা সপ্তমী


পঞ্জিকা অনুযায়ী, চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথির সূচনা ২১ মার্চ রাত ০২:৪৫ মিনিটে শুরু হবে এবং ২২ মার্চ সকাল ০৪:২৩ মিনিটে শেষ হবে। শীতলা সপ্তমীতে পূজার জন্য শুভ সময় ২১ মার্চ সকাল ০৬:২৪ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ০৬:৩৩ মিনিট পর্যন্ত। এই সময় সাধক দেবী মা শীতলার পূজা করতে পারেন।


শীতলা অষ্টমী শুভ মুহূর্ত


চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি ২২ মার্চ সকাল ০৪:২৩ মিনিটে শুরু হবে।  ২৩ মার্চ সকাল ০৫:২৩ মিনিটে শেষ হবে। এই দিনই বসৌড়া পালিত হবে। চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মা শীতলার বিশেষ পুজো করা হয়।


শীতলা সপ্তমী শুভ যোগ



  • চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে অনেক মঙ্গল যোগ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সিদ্ধি যোগ সন্ধ্যা ০৬:৪২ মিনিট পর্যন্ত। এই যোগে মা শীতলার পুজো করলে শুভ কাজে সাফল্য ও সিদ্ধি পাওয়া যাবে।

  • এছাড়াও শীতলা সপ্তমীতে রবি যোগ তৈরি হবে। এই যোগে মা শীতলার সাধনা করলে আরোগ্য লাভ হয়। অন্যদিকে, ভদ্রা যোগ থাকবে দুপুর ০৩:৩৮ মিনিট পর্যন্ত। বিশ্বাস করা হয়, যে বাড়ির মহিলারা পবিত্র মনে এই ব্রত পালন করে, সেই পরিবারকে শীতলা দেবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ করেন।