ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম : তিথি অনুসারে, বুধবার তারাপীঠে তারা মায়ের আবির্ভাব দিবস। এদিন মূল মন্দির থেকে বিরাম মঞ্চে বের করে আনা হয় মাকে। এদিন তারা মা'কে মন্দিরের বাইরে দেখার সুযোগ পান ভক্তরা । আশ্বিন মাসের শুক্লা চতুর্দশীর এই তিথিতে প্রতিবছর মন্দির চত্বরে তিল ধারনের জায়গা থাকে না। বুধবার তাই তারাপীঠ মন্দিরে ভক্তদের ঢল নেমেছে। সকাল থেকে তারা মায়ের বিশেষ পুজো-অর্চনা হয়। এদিন মা তারাকে বিরাম মঞ্চে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসানো হয়।
ঘুম ভাঙিয়ে ভোর তিনটে নাগাদ মূল মন্দির থেকে বের করে আনা হন মাকে। স্নানপর্ব মিটতেই সাজানো হয় রাজ-রাজেশ্বরী সাজে! এরপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে মঙ্গল আরতি পর্ব! কথিত রয়েছে, এই দিনে দেবীর শিলামূর্তি শ্মশান থেকে নিয়ে এসে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন জয়দত্ত সওদাগর। তাই এই দিনটিই তারাপীঠে তারামায়ের আবির্ভাব তিথি হিসাবে ধরা হয়।
এই দিনে তারাপীঠ মন্দিরে দিনভর তারা মায়ের বিশেষ পুজো-অর্চনা হয়। এদিন ভোরে আরতির পরে মা তারা-কে গর্ভগৃহে থেকে বের করে এনে বিরাম মঞ্চে বসানো হয়। সারাদিন সেখানেই দেবী মূর্তি থাকে এবং বিশেষ পুজো হয়। সন্ধ্যারতির পরই দেবী তারাকে গর্ভগৃহে ফের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবার সন্ধ্যারতি হয় এবং অন্নভোগ দেওয়া হয়।
এদিন শ্মশানের দিকে মুখ করে অর্থাৎ পশ্চিম দিক করে বসেন তারা মা। কথিত আছে, পশ্চিম দিকে রয়েছেন দেবী তারার বোন মুলুঠি মা। তাঁর সঙ্গে এদিন সাক্ষাৎ হয় তারা মায়ের। আবির্ভাব তিথিতেই দেবী তারা পশ্চিমমুখী হয়ে বসেন। কথিত আছে, তারা মায়ের বোন দেবী মৌলাক্ষী। এদিন তাঁদের দেখা হয়। ঝাড়খণ্ডের মুলুটিতে মৌলাক্ষী মায়ের মন্দির। তাই এদিন দেবী তারা পশ্চিমমুখী হয়ে বসেন।
কথিত আছে জয়দত্ত নামে এক বণিক দ্বারকা নদীতে নৌকায় চড়ে বাণিজ্য করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি তারাপীঠে নোঙর করেন। সেখানে সাপের কামড়ে তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয়। তারাপীঠে নোঙর করায় বণিকের ভৃত্য রান্না করার জন্য একটি কাটা শোল মাছ পাশের একটি পুকুরে ধুতে যায়। পুকুরের জলের সংস্পর্শে আসতেই কাটা শোল মাছটি জীবিত হয়ে পুকুরের গভীরে চলে যায়। ভৃত্যরা এই অলৌকিক ঘটনাটি বণিককে জানালে, তিনি সর্পদংশনে মৃত তাঁর পুত্রকে সেই পুকুরের জলে স্নান করালে মৃত পুত্র বেঁচে ওঠে এবং জয় তারা, জয় তারা বলতে থাকেন। সেই পুকুরটি জীবিত কুণ্ড নামে খ্যাত। সেই রাতেই বণিককে স্বপ্ন দেন মা তারা। দিনটি ছিল শুক্লা চতুর্দশী। স্বপ্ন পেয়ে সেই দিনটিতেই তারাপীঠে মা তারার পুজো শুরু করেন বণিক জয় দত্ত।
আবির্ভাব তিথিতে তারা মা-কে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। সারাদিন দেবী অন্নভোগ গ্রহণ করেন না। কেবল ফল, মিষ্টি দিয়ে শীতলভোগ দেওয়া হয়। পুজো শেষে রাতে দেবীকে অন্নভোগ তথা মহাভোগ দেওয়া হয়। ভোগে খিচুড়ি, পোলাও সহ পাঁচরকম ভাজা, মাছ, বলির মাংস, পায়েস নিবেদন করা হয়।
তারাপীঠের মা কখনও পুজিতা হন দূর্গা আবার কখনও অন্নপূর্ণা রূপে। একটা দিন মাকে কাছ থেকে দেখতেও মূলত ছুটে আসেন দূরদূরান্তের ভক্তরা।