কলকাতা: কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে রাতজুড়ে দেবী কালীর আরাধনা করা হয়। কালী (Kali) নাম শুনতেই চোখে ভেসে ওঠে এক দিগম্বরী রূপ। যিনি কাজলের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, মুক্তকেশী, বিবস্ত্রা, চতুর্ভুজে তাঁর বীরত্বের ব্যঞ্জনা। মন্ত্রচ্চারণে যাকে আমরা বলে থাকি, "করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্। কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুণ্ডমালাবিভূষিতাম্"। ভারতবর্ষের (India) অন্যতম প্রধান শক্তিদেবতা তিনি, দশ মহাবিদ্যার অন্যতমাও। 


‘কালী’শব্দটি ‘কাল’শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। এই শব্দের অর্থ ‘কৃষ্ণ’বা ‘ঘোর বর্ণ'। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ যে ভদ্রকালীর উল্লেখ আছে, তা দেবী দুর্গারই একটি রূপ। মহাভারতে ‘কালরাত্রি’ বা ‘কালী’নামে আরও এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘কাল’শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে। এক‘নির্ধারিত সময়’এবং অন্যটি ‘মৃত্যু'। কিন্তু দেবী প্রসঙ্গে এই শব্দের মানে "সময়ের থেকে উচ্চতর।" সমোচ্চারিত শব্দ ‘কালো’র সঙ্গে-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সংস্কৃত সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক টমাস কবার্নের মতে, ‘কালী’ শব্দটি ‘কৃষ্ণবর্ণ’ বোঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে। প্রকৃত অর্থে কাল (সময়)-কে যিনি রচনা করেন তিনিই (কাল+ঈ) কালী।


শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির আদি কারণ। যে মহাকাল সব রঙকে গ্রাস করেই কালো। সেই কালো রূপেই কালী দিগম্বরী, তিনি রূদ্ররূপের প্রতীক, তিনি সংহাররূপী। কখনও চামুণ্ডা, কখনও মহাকালী, কখনও শ্যামা। তিনি সেই শক্তির আধার, যিনি আঁধারে উপাসিত হন, তিনি বঙ্গদেশের সেই অধিষ্ঠাত্রী দেবী।


বীরভূমের তারাপীঠেও গভীর রাতে বিশেষ পূজোর আয়োজন চলছে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালী মন্দির-সহ জেলার বিভিন্ন মন্দিরেও বিশেষ পুজো। বারাসত, মধ্যমগ্রাম, নৈহাটি থেকে শুরু করে কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনাতেও দুর্গাপুজোর মতো বড় মণ্ডপ করে চলছে শক্তিদেবীর আরাধনা। শক্তি আরাধনাতেও থিমের রমরমা বাংলাজুড়ে।


আরও পড়ুন, 'রুদ্রমূর্তি থেকে সংহাররূপী', কালীর নামেই লুকিয়ে আছে পুরাণের ভয়ঙ্কর সব কাহিনি


অমাবস্যায় দক্ষিণাকালীর আরাধনায় মেতে ওঠে বাঙালি। দেবীপক্ষের শেষ উত্‍সবে মাতোয়ারা কার্শিয়াং থেকে কাকদ্বীপ। ভৌম অমাবস্যার রাতে আজ মহাশক্তির আরাধনা। সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে মানুষের ঢল। ভক্তদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই কালীঘাট চত্বরে। একই ছবি দক্ষিণেশ্বর আর আদ্যাপীঠেও।


কালীপুজোর রাতের আকাশ বাজির রঙে হয়ে উঠবে মোহময়ী। বাংলার ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করার রীতি তো আছেই। আলোর রোশনাই চতুর্দিকে। সেইসঙ্গে বাজির গন্ধ মিশে তৈরি এক নস্ট্যালজিক পরিবেশ। কালী পুজোর সঙ্গে ধনদেবীর আরাধনাও হয় বাংলায়। সংসারের মঙ্গল কামনায় অলক্ষ্মীকে বিদায় জানিয়ে লক্ষ্মীকে আমন্ত্রণ জানানোর রীতি প্রতি ঘরে ঘরে।