নয়াদিল্লি: জ্যোতিষচর্চায় আগ্রহ থাকুক বা না থাকুক, খবরের কাগজ, ইন্টারনেটে রাশিফল সংক্রান্ত খবর এবং পোস্টের দিকে চোখ চলে যায় অজান্তেই। নেহাত কৌতূহলবশতও জন্মের মাস অনুযায়ী রাশিফল মিলিয়ে দেখে নেন অনেকে। কিন্তু জ্যোতিষচর্চা এবং রাশিফলের যৌক্তিকতা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশ্ন উঠছে, ২০০০ বছর আগে গ্রহ-নক্ষত্র যে অবস্থানে ছিল, বর্তমানে তা পাল্টে গিয়েছে। ফলে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের নিরিখে তৈরি রাশিচক্রও ২০০০ পুরনো। বর্তমানে গ্রহণ-নক্ষত্রের অবস্থনের সঙ্গে কোনও ভাবেই মিলবে না। তাই ২০০০ বছর আগের রাশিচক্র অনুযায়ী, বর্তমানে ভাগ্যযাচাই আদৌ সম্ভব কি? এমনকি জন্মের নিরিখে ব্যক্তিবিশেষের রাশিও আর এক থাকার কথা নয় বলে দাবি উঠছে। (Zodiac Signs)

Continues below advertisement

কোনও ব্যক্তির জন্মের সময় ১২টি নক্ষত্রমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে সূর্যের গতিপথ ও অবস্থানের নিরিখে তাঁর রাশি নির্ধারণ করা হয়। নক্ষত্রমণ্ডলের নামেই নামকরণ হয়েছে ১২টি রাশির। আজ থেকে ২০০০ বছর আগে ওই নক্ষত্রমণ্ডল দেখেই সময় নির্ধারণ করতেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের অঙ্কও কষা হতো। কিন্তু ২০০০ বছর পরও সূর্যের গতিপথের ওই একই নকশা ব্যবহৃত হচ্ছে জ্যোতিষচর্চায়। সেই অনুযায়ী রাশি নির্ধারণ করে ভাগ্যযাচাই চলছে সর্বত্র, যার সঙ্গে নক্ষত্রমণ্ডলের বর্তমান অবস্থানের কোনও মিল নেই। (Star Signs)

সাধারণত ২০ মার্চ বসন্ত বিষুব শুরু হয়, যেদিন পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সমান সূর্যালোক পায়। দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যও প্রায় সমান হয়। আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে এই বসন্ত বিষুব থেকেই জ্যোতিষচর্চার ক্যালেন্ডারের সূচনা ঘটে বলে জানা যায়। সেই সময় সূর্যের অবস্থান ছিল মেষ রাশির সামনে। কিন্তু ২০২৫ সালে বসন্ত বিষুবের সময় সূর্য ছিল মীন রাশির সামনে। আগামী ৬০০ বছর পর আবার বসন্ত বিষুবের সময় সূর্য কুম্ভ রাশির সামনে থাকবে। 

Continues below advertisement

তাই আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানে রদবদল ঘটলে, রাশিচক্র কখনও এক থাকতে পারে না। তাই কেউ যদি নিজেকে মেষ রাতির জাতক বলে মনে করেন, বাস্তবে তিনি মীন রাশির জাতক হতে পারেন। এমনকি পৃথিবীর ঘূর্ণনে সামান্য় এদিক ওদিক হলেও রাশিচক্রে রদবদল ঘটে। বিজ্ঞান বলছে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির নিরিখে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিতে পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে, প্রতি ৭০ বছর অন্তর পৃথিবী থেকে নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থানে ১ ডিগ্রি ফারাক বোঝা যায়। ফলে আমাদের বোঝাপড়াতেও পরিবর্তন আসে। সেই কারণেই পশ্চিমি জ্যোতিষবিদ্যার সঙ্গে বর্তমানে ভারতের জ্যোতিষবিদ্যা মেলে না বলেও মত অনেকের।

তবে রাশিফল দেখতে, সেই মতো চলতে অভ্যস্ত যাঁরা, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে মত জ্যোতষচর্চার জন্য সুপরিচিত সি নিকোলাস। তাঁর মতে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের এই পরিবর্তনের কথা বুঝতে পেরেছিলেন প্রাচীনকালের জ্যোতিষীরা। সেই কারণেই বসন্ত বিষুবে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য যখন সমান, সেই সময় থেকে রাশিচক্র তৈরি করেন। ফলে পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, ইতিহাসের যে পর্যায়েই থাকুন না কেন কেউ, সূচনায় কোনও হেরফের ঘটবে না।