নয়াদিল্লি: সূর্যের আয়ু ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর কী হবে, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। সেই চিন্তা থেকেই 'কৃত্রিম সূর্য' তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল চিন। পাশাপাশি, পরিবেশের ক্ষতি না করে, বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যও ছিল। আর তাতেই এবার বড় সাফল্য অর্জন করল তারা। কারণ তাদের তৈরি 'কৃত্রিম সূর্য' ১০০০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে প্লাজমা ধরে রাখতে সক্ষম হল। ২০২৩ সালে যেখানে ৪০৩ সেকেন্ডের জন্য প্লাজমা ধরে রাখতে পেরেছিল ওই 'কৃত্রিম সূর্য', ১০০০ সেকেন্ডের মাপকাঠি অতিক্রম করে নিজেরই আগের রেকর্ড ভেঙে দিল সেটি। (Artificial Sun)


পদার্থের মোট চারটি অবস্থা রয়েছে- কঠিন, তরল, গ্যাল এবং প্লাজমা। উষ্ণ আয়ন এবং ইলেক্ট্রন মিলেমিশেই প্লাজমা অবস্থা তৈরি হয়। পদার্থ প্লাজমা অবস্থায় থাকলেও, তা থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব হয়। 'কৃত্রিম সূর্য' তৈরি করতে পরমাণুর ফিউশন ঘটিয়ে প্লাজমা থেকে শক্তি উৎপন্ন করতে উদ্যোগী হয় চিন, যা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু সেই কাজেই বড় সাফল্য পেল তারা। (Science News)


চিনের Experimenta. Advanced Superconducting Tokamak (EAST) ফিউশন এনার্জি রিয়্যাক্টর, যা একটি পারমাণবিক চুল্লি, সেটিকে 'কৃত্রিম সূর্য' নামে অভিহিত করা হয়। আগে ৪০৩ সেকেন্ডের বেশি প্লাজমা ধরে রাখতে পারেনি সেটি। কিন্তু এবার ১০০০ সেকেন্ডের বেশ সময় প্লাজমা ধরে রাখতে সফল হল, তাও আবার ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্লাজমা। এই সাফল্য গোটা পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুতর। সুদূর ভবিষ্যতে যদি সূর্য নিভেও যায়, সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে যেমন, তেমনই বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করা যাবে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের।


চিনের ইনস্টিটিউট অফ প্লাজমা ফিজিক্সের ডিরক্টর সং ইয়ুনতাও বলেন, “প্লাজমার স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালন চালু রাখতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, স্থিতিশীল রেখে ফিউশন ডিভাইসকে ১০০০ সেকেন্ড সেকেন্ড চালাতে হবে। অবিরাম শক্তি উৎপন্ন করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। EAST-এ  আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মিলবে বলে আশাবাদী আমরা। এতে ফিউশন এনার্জিকে মানব সভ্যতার কল্যাণে ব্য়বহার করা সম্ভব হবে।” ১০০০ সেকেন্ডের বেশি প্লাজমা ধরে রাখতে পারলেও, এখনও পারমাণবিক চুল্লি নিজস্ব শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়নি। শীঘ্রই তা সম্ভব হবে বলে মত বিজ্ঞানীদের।


২০০৬ সাল থেকে EAST পারমাণবিক চুল্লিটি নিয়ে কাজ করছেন চিনা বিজ্ঞানীরা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার পরীক্ষা হয়েছে। লক্ষ্যে পৌঁছতে আনহুই প্রদেশে নয়া পারমাণবিক চুল্লি নির্ভর গবেষণা কেন্দ্রও গড়ে তুলছে চিন। এ থেকে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনও ঘটে না। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না যেমন, তেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কম।


শক্তি উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে পারমাণবিক চুল্লি অত্যন্ত ভরসার জায়গা। আয়ন এবং ইলেকট্রনের দৌলতেই এত শক্তি সূর্যের। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসগুলি একত্রিত হয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে বিদ্যুতের ঘাটতি যেমন ঘোচানো যাবে, তেমনই সৌরজগতের বাইরে মহাকাশ অভিযানেও হাত শক্ত হবে, আবার সুদূর ভবিষ্যতে সূর্যের বিকল্পও পাওয়া যাবে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের।


পারমাণবিক চুল্লি নির্ভর শক্তি উৎপাদনের প্রচেষ্টা নতুন নয়। কিন্তু ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছনো এবং তার দীর্ঘমেয়াদি ফল লাভ কার দুঃসাধ্য কাজ ছিল। তাই 'কৃত্রিম সূর্য' ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্লাজমা ধরে রাখতে সফল হওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন বিজ্ঞানীরা।