নয়াদিল্লি: দাম্পত্য টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। যত দিন যাচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে গোটা পৃথিবীতে। পেঙ্গুইনদের মধ্যেও ‘ডিভোর্স’ বাড়ছে বলে এবার রিপোর্ট সামনে এল। এমনিতে সম্পর্কে নিয়ে পেঙ্গুইনরা বেশ রক্ষণশীল। আজীবন এক সঙ্গীর সঙ্গেই থাকতে অভ্যস্ত তারা। কিন্তু আজকাল সঙ্গীর সঙ্গে তাদের বনিবনা হচ্ছে না তাদের। তাই বিকল্পের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে। (Penguin Divorce Rate)


গত ১১ জানুয়ারি Ecology and Evolution জার্নালে এই মর্মে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ফিলিপ আইল্যান্ডের পেঙ্গুইনদের মধ্যে ‘ডিভোর্স’ বেড়েছে বলে তাতে দাবি করেছেন গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, নিজের দীর্ঘদিনের সঙ্গীর সঙ্গে আর সন্তুষ্ট বোধ করছে না পেঙ্গুইনরা। তাই বিকল্প সঙ্গীর খোঁজার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। (Science News)


গত ১০ বছর ধরে নজরদারি চালিয়ে, বিশেষ করে সঙ্গমের ঋতুতে পেঙ্গুইনদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। জানিয়েছেন, ওই সময় সঙ্গমের ঋতুতে দীর্ঘদিনের সঙ্গীর পরিবর্তে অন্য সঙ্গী খুঁজছে পেঙ্গুইনরা। কখনও কখনও আবার সঙ্গী অদলবদলও করছে তারা। এর ফলে পেঙ্গুইন ছানার জন্মহারেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। 


অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষক রিচার্ড রেইনা জানিয়েছেন, এমনিতে সঙ্গীর সঙ্গে জুড়ে থাকে পেঙ্গুইনরা। কিন্তু ইদানীং কালে তাদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঙ্গমের ঋতুতে যখন আশানুরূপ ফল মিলছে না, প্রজননে যখন আশানুরূপ ফল মিলছে না, পরের ঋতুতে অন্য সঙ্গীর দিকে ঝুঁকছে তারা। রেইনা বলেন, “১০০০ জোড়া পেঙ্গুইনের উপর নজরদারি চালানো হয়। এর মধ্যে ২৫০ জোড়ার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তবে যাদের মধ্যে প্রজনন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে, তাদের ছাড়াছাড়ি হয়নি।”


পেঙ্গুইনদের মধ্যে ‘ডিভোর্স’ বৃদ্ধির জন্য পরিবেশজনিত কার্যকারণকেও দায়ী করছেন গবেষকরা। পরিবেশ যেভাবে পাল্টে যাচ্ছে, তাতে পেঙ্গুইনদের প্রজনন ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মত তাঁদের। এর ফলেই পারস্পরিক বোঝাপড়ায় প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘদিনের সঙ্গীর থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে পেঙ্গুইনরা। শুধু তাই নয়, খাদ্যসঙ্কটের সঙ্গেও যুঝতে হচ্ছে পেঙ্গুইনদের। পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে তাদের। সেই নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গেও খিটিমিটি লাগছে। ফলে টান কমছে পরস্পরের প্রতি। 


পেঙ্গুইনরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে বিশ্বাসী। চিরকালীন প্রেম, একজনের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পক্ষে তারা। কিন্তু সেই ধারা বদলাচ্ছে। সমাজ-সংসারে মানুষের পারস্পরিক সমীকরণ পাল্টে যায়। পশু বা পাখিদের মধ্যে এতদিন সেই ধারা চোখে পড়েনি সেভাবে। গবেষকদের মতে, প্রাণীজগতের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশের উপর গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। এখনই সে ব্যাপারে সক্রিয় হতে হবে সকলকে।