ঢাকা: আমেরিকার সঙ্গে এবার মহাকাশ অভিযান চুক্তি স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ। চাঁদের মাটিতে উপনিবেশ গড়ার লক্ষ্য়ে Artemis Mission নিয়ে ব্যস্ত আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. পরবর্তীতে মঙ্গলের মাটিতেও উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। সেই অভিযানের অংশ হতে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর করল ঢাকা। (Bangladesh Signs Artemis Accords)

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিব আশরফউদ্দিন দেশের হয়ে ওই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরাকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস বলেন, “আর্টেমিস চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ, যা আগামী দিনে NASA এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের বোঝাপড়াকে উন্নততর করে তুলবে। এই চুক্তিস্বাক্ষর করে মুক্ত, দায়িত্বশীল এবং শান্তিপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের ভিত্তি স্থাপন করল বাংলাদেশ।” (Artemis Accords)

এখনও পর্যন্ত ৫০টির বেশি দেশ NASA-র সঙ্গে Artemis চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। মহাকাশ অভিযানে এই প্রথম সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা পাওয়া গেল, যাতে মহাকাশ অভিযান হয় নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন। মহাকাশ অভিযানে যাতে জাতির কল্যাণ প্রাধান্য পায়, সেই লক্ষ্যেই চুক্তি। ২০২৩ সালেই Artemis চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারত। পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মহাশূন্যেও আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় ভারত। এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ, চন্দ্রাভিযান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, প্রযুক্তি থেকে অন্যান্য সম্পদ, সবকিছু সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেবে NASA। 

Artemis চুক্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক মাসে বেনজির টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দেশের মানুষকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন থেকে ইউনূসের আগমন, তার পরও দীর্ঘ সময় ধরে চলা অচলাবস্থার জেরে আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে এই চুক্তি দেশের বিজ্ঞান মনস্ক মানুষকে আশা জোগাচ্ছে। 

NASA-র ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেত্রো বলেন, “বাংলাদেশ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আপ্লুত। ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। চাঁদ পেরিয়ে, মহাশূন্যের গভীরে শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের লক্ষ্যেই এই চুক্তি। একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী আমরা, পরস্পরের থেকে শিখতে আগ্রহী। বাংলাদেশের প্রতিভা এবে দূরদৃষ্টি মানব সভ্যতাকে মহাকাশ গবেষণার দুনিয়ায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

Artemis চুক্তির দ্বারা বাংলাদেশ উপকৃতও হবে। NASA-র থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Space Research and Remote Sensing Organization (SPARRSO) মহাকাশ থেকে নজরদারি চালানোর কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করতে পারবে। জলবায়ুর উপর নজরদারি চালানো যাবে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা সহজতর হয়ে উঠবে আগামীতে। পাশাপাশি, NASA-র শিক্ষামূলক প্রকল্পের অংশও হতে পারবে বাংলাদেশের পড়ুয়ার। মোটা টাকার স্কলারশিপ মিলবে, সুযোগ মিলবে বিদেশে গিয়ে শিক্ষারও।

এই মুহূর্তে জাপানের JAXA, NASA এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ESA-র সঙ্গে পরিবেশ এবং জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণামূলক কাজে যুক্ত বাংলাদেশের SPARRSO. তাদের কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমেই নজরদারি চালানো হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ Bangladesh Satellite 1 (Bangabandhu Satellite 1)-এর উৎক্ষেপণ হয়। তার পর Bangladesh Satellite 2-রও উৎক্ষেপণ করে SPARRSO.