নয়াদিল্লি: চন্দ্রাভিযানে ফের ইতিহাস রচনা করল চিন। চাঁদের উল্টো পিঠ  থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরল তাদের চন্দ্রযান Chang'e-6. চাঁদের উল্টো পিঠ থেকে নমুনা সংগ্রহকারী প্রথম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল চিন। পৃথিবী থেকে চাঁদের উল্টো পিঠটি কখনওই দেখা যায় না। ফলে চিনের এই কীর্তিতে সাড়া পড়ে গিয়েছে। চাঁদের যে পিঠটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়, উল্টো পিঠটি থেকে অনেক আলাদা। তাই সেখান থেকে সংগ্রহ করে আনা নমুনা অনেক তথ্য দিতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। (Chang'e-6 Moon Sample)


চিনের ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সেস-এর গ্রহ ভূতত্ত্ববিদ লং শিয়াও বলেন, "মানব সভ্যতার ইতিহাসে Chang'e-6 প্রথম মহাকাশযান, যারা চাঁদের উল্টো পিঠে গিয়ে পৌঁছে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এনেছে। বিজ্ঞান জগতের জন্য এই অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকলের এতে আনন্দিত হওয়া উচিত।" (Chang'e-6 Returns from Moon)


চাঁদের উল্টো পিঠ বলতে চাঁদের অন্ধকার দিকটিকে বোঝায়। পৃথিবী থেকে ওই দিকটি কখনও দেখা যায় না। সূর্যালোকও পৌঁছয় না সেখানে। পৃথিবীর সঙ্গে জোয়ার-ভাঁটার সম্পর্ক চাঁদের। যে সময় নিজের অক্ষে পাক খায় চাঁদ, ওই একই সময়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে চাঁদের একটি পিঠই পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান। 


আরও পড়ুন: Sunita Williams: ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, মহাশূন্য়ে আটকে সুনীতা, ফেরানোর দিন জানাতে পারল না NASA


তাই বলে চাঁদের উল্টো পিঠ নিয়ে উৎসাহে খামতি নেই। কারণ চাঁদের যে অংশ পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান, তার সঙ্গে উল্টো পিঠের ফারাক অনেক। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের উল্টোপিঠে মাটির আবরণ অনেক পুরু। গহ্বরের সংখ্যাও বেশি। লাভায় ঢাকা সমতল অঞ্চলের বিস্তৃতি অনেক কম, যা থেকে চাঁদের বিবর্তনের ইতিহাস জানা সম্ভব বলে মত বিজ্ঞানীদের। 


এখনও পর্যন্ত চাঁদের আলোকিত অংশেই পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখান থেকে আনা নমুনা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। তাই দুই পিঠের চরিত্র কেন আলাদা, তা উল্টো পিঠ থেকে আনা নমুনা থেকে জানা সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের বুকে ৫৬ দিনের অভিযানে পাঠানো হয়েছিল Chang'e -6 চন্দ্রযানকে। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে ধীরে ধীরে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর, ২৫০০ কিলোমিটার চওড়া আইতকিন অববাহিকায় নামে সেটি। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চাঁদের বুকের ওই অববাহিকা এখনও পর্যন্ত সৌরজগতের বৃহত্তম। ঠিক কী থেকে ওই অববাহিকার সৃষ্টি, তা স্পষ্ট নয়। তবে মাটি খুঁড়ে তুলে আনা নমুনা পরীক্ষা করে সেই সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে। Chang'e -6 সেই কাজই করে দেখিয়েছে। চাঁদের অববাহিকায় নেমে মাটি খুঁড়ে তুলে আনে প্রথমে। সেখান থেকে ঊর্ধ্বগামী আর একটি যানে নমুনা তুলে দেয়। সেই যান চাঁদের কক্ষপথে থাকা সার্ভিস মডিউলে পৌঁছে দেয় ওই নমুনা। এবার পৃথিবীতে ফিরে এল ওই সার্ভিস মডিউল। এর আগে, ২০১৯ সালে চিনের Chang'e-4 চন্দ্রযানও ওই এলাকায় অবতরণ করে। রোভারের সাহায্য়ে Von Karman গহ্বরে বিচরণ করে, পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়।