নয়াদিল্লি: দীর্ঘদিন ধরে চলছিল প্রস্তুতি। পদে পদে বাধা-বিপত্তি নেমে এসেছে। তার পরও জীবন বাজি রেখে মহাকাশে রওনা দেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস। কিন্তু মহাকাশে পৌঁছলেও, সেখান থেকে তাঁর ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখনই সুনীতা এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোরের পৃথিবীতে ফেরার কোনও উপায় নেই বলে জানিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. তাঁদের কাছে আর মাত্র ২৭ দিনের জ্বালানি বেঁচে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে সুনীতা এবং ব্যারিকে নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিজ্ঞানমহলে।  (Sunita Williams)


গত ৫ জুন অত্যাধুনিক CST-200 Boeng Starliner মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন সুনীতা এবং ব্যারি।  ১৪ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার পর থেকে ১২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও মহাকাশে আটকে রয়েছেন সুনীতা এবং ব্যারি। বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। পৃথিবীতে ফেরার জন্য  ওই মহাকাশযানে থ্রাস্টার হিসেবে ২৮টি ছোট রকেট ব্যবহার করার কথা ছিল। কিন্তু উড়ানের ২৫ ঘণ্টার মধ্যেই ওই রকেটগুলি থেকে ছিদ্রপথে বার বার হিলিয়াম বেরিয়ে আসছে বলে জানা যায়। এখনও পর্যন্ত পাঁচ বার এই ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরতে ১৪টি থ্রাস্টার ঠিক থাকা জরুরি। (Barry Wilmore)


এর আগে NASA জানিয়েছিল, সমস্যা মিটিয়ে ২৬ জুন সুনীতা এবং ব্যারিকে ফেরানো হবে। কিন্তু এখন তারা বলছে, ২৬ জুন ফেরানো সম্ভব নয়। কবে সুনীতা এবং ব্যারিকে পৃথিবীতে ফেরানো হবে, তার কোনও নির্দিষ্ট দিনও জানাতে পারেনি NASA. বরং প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলি খতিয়ে দোখা হচ্ছে, তাতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে তারা। নির্দিষ্ট দিন ক্ষণ না জানানোতেই NASA-র এই ঘোষণা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত চার বার সুনীতা এবং ব্য়ারির পৃথিবীতে ফেরার দিন পাল্টেছে। (NASA Space Mission)


আরও পড়ুন: Quasi Moon Naming: পৃথিবীর আধা উপগ্রহের নামকরণ, সাধারণ মানুষের সুপারিশ চাইছেন বিজ্ঞানীরা, নাম পাঠাতে পারেন আপনিও


এরই মধ্যে NASA এবং বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে। মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করা হুইসলব্লোয়ারদের দাবি, রকেটে যে প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে, ছিদ্রপথে হিলিয়াম বেরিয়ে আসছে, তা আগে থেকেই জানত NASA এবং বোয়িং। সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না করেই সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠায় তারা। সেই কারণেই গত ১২ দিন ধরে সুনীতা এবং ব্যারি মহাকাশে আটকে রয়েছেন এবং তাঁদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। 


NASA যদিও দাবি করছে, সুনীতা এবং ব্যারির জীবন নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করে চলেছেন। কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটি ৪৫ দিন মহাশূন্যে থাকতে পারে। এর মধ্যে ১৮ দিন পেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই অভিযান নিয়ে NASA-র সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল বোয়িং। এখনও পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তার পরও কেন ঝুঁকিপূর্ণ মহাকাশযানটিতে চাপিয়ে সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠানো হল, উঠছে প্রশ্ন।


বিতর্ক বাড়িয়েছে NASA-র স্পেসওয়াক বাতিলের ঘোষণাও। সোমবার ট্রেসি সি ডাইসন এবং মাইক ব্যারাটের স্পেসওয়াকের কথা ছিল। কিন্তু ডাইসনের স্পেসস্যুটের মধ্যে যে সার্ভিস অ্যান্ড কুলিং আমবিলিক্য়াল ইউনিট ছিল, তা থেকে চুঁইয়ে জল পড়তে শুরু করে। তড়িঘড়ি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ঢুকে যান তাঁরা। ফলে মহাকাশ অভিযানের ব্যবস্থাপনা ঘিরে প্রশ্নের মুখে NASA.