কলকাতা: গুচ্ছ গুচ্ছ গ্রহাণু (Asteroid Ripped Off) প্রত্যেক বছর পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, কিন্তু আছড়ে পড়ে কটা? ভাবলে অবাক হতে হয় ঠিকই। তবে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বহু ক্ষেত্রে পৃথিবীর নিজস্ব 'প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই' গ্রহাণুগুলির 'মোকাবিলা' করে। নির্দিষ্ট করে বললে, পৃথিবীর (Earth Gravity Rips Off Asteroid)   শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি গ্রহাণুগুলিকে টুকরো-টুকরো করে ফেলে। তাই এই গ্রহে আছড়ে পড়ে তার ক্ষতি করার শক্তি হারায় সেগুলি। 


কোন পথে হদিশ?
সালটা ১৯৯৪। মহাজাগতিক ঘটনা নিয়ে উৎসাহী পর্যবেক্ষকের নজরে আসে, Shoemaker-Levy 9, নামের একটি ধূমকেতু কী ভাবে বৃহস্পতির 'টাইডাল ফোর্সের' টানে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তবে একই ঘটনা যে পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জানতে পারেননি পর্যবেক্ষকরা। যদিও সুইডেনের  Luleå University of Technology-র প্ল্যানেটরি সায়েন্টিস্ট মাইকেল গ্র্যানভিক দীর্ঘ সময় ধরে এমন কিছুই খুঁজে চলেছেন। কাজটা সহজ ছিল না, হালেই এক বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইটকে জানান তিনি। কেন, সে কথাও ব্যাখ্যা করেন। বিজ্ঞানর মতে, 'সাধারণ ভাবে এই প্রক্রিয়ায় গ্রহাণু থেকে কোনও টুকরো তৈরি হলে তা নিমেষের মধ্যে চারপাশে মিশে যায়। ফলে আলাদা করে তাকে শনাক্ত করা ভীষণ কঠিন।' দীর্ঘদিন ধরে 'আশার আলো'  দেখেননি তিনি। তবে ২০১৬ সালে বদলে যায় ছবিটা। মাইকেল গ্র্যানভিক সেই সময় একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করতে সাহায্য করেন যা কিনা বিভিন্ন আকারের গ্রহাণুর গতিপথ নির্ধারণ করবে। মূল লক্ষ্য ছিল একটাই। সূর্য থেকে বিভিন্ন দূরতে এরা ঠিক কত সংখ্যায় রয়েছে, তা জানা। 
গ্র্যানভিক ও তাঁর সতীর্থরা এই মডেলের সাহায্যে যে ফলাফল পেয়েছিলেন, তার সঙ্গে  Catalina Sky Survey-র সাত বছরের পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফ মিলিয়ে বিচার করেন। এখানে একটা বড় অসঙ্গতি নজরে পড়ে তাঁদের। গাণিতিক মডেল থেকে যে সংখ্যক গ্রহাণুর পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল, পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। নির্দিষ্ট করে বললে, পৃথিবী এবং শুক্রগ্রহের কক্ষপথের দূরত্বে থাকা গ্রহাণুর সংখ্যা তাঁদের মডেলের অনুমানের থেকে অনেটাই বেশি। 


আর যা...
বিজ্ঞানীরা দেখলেন, যে গ্রহাণুগুলি তাঁরা 'মিস' করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই আকারে অত্যন্ত ছোট। সূর্যকে প্রায় গোলাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। গ্র্যানভিকের 'ইউরেকা' মুহূর্ত ছিল এটি। তাঁর মতে, এগুলি আসলে, বড় গ্রহাণু থেকে ভেঙে পড়া গ্রহাণুর টুকরো। এই ব্যাখ্যা পরে পরীক্ষাও করে দেখেছেন তিনি। তাঁর দাবি, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের জেরেই বড় গ্রহাণু টুকরো হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের বড় অংশ, এতে আশার আলো দেখছেন ঠিকই। তবে কারও কারও মতে, এর ফলে যে ছোট ছোট টুকরো তৈরি হয় তা থেকে পৃথিবীর বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে বড় গ্রহাণুর ধাক্কা সামলাতে পৃথিবী যে একাই একশো, সেটা স্পষ্ট, দাবি সুইডেনের বিজ্ঞানীদলের।


আরও পড়ুন:কেন লালকে বিপদ সঙ্কেত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়? এর পিছনে কোনও বিজ্ঞান কি রয়েছে?