কলকাতা: বাড়িতে কয়েকমাস বয়সি কোনও খুদে রয়েছে? তাকে কোলে নিয়ে মাঝেসাঝে কথা বলার চেষ্টা করেন? হালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে শিশুদের সঙ্গে সুর করে কথা বলার চেষ্টা করলে পরবর্তীতে তাদের ভাষাগত দক্ষতার (Language Development In Kids) বিকাশে সাহায্য হয়। কী ভাবে? সেটিই উঠে এসেছে 'নেচার কমিউনিকেশন' (Journal Nature Communications) শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায়।
কী জানা গেল?
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। তাঁদের মতে, শিশুরা 'রিদমিক ইনফরমেশন' থেকে ভাষার ব্যবহার শিখে থাকে। সহজ করে বললে, নার্সারি রাইমস বা ছড়া এবং ছোটদের গান যে ভাবে সুর করে গাওয়া হয়, শিশুরা সেখান থেকে অনেক বেশি ভাষা শিখতে পারে। ওই 'রিদমিক ইনফরমেশন'-এ সুরের যে ওঠানামা থাকে, তা কোনও শিশুকে ভাষা শিখতে সাহায্য করে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদল আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, শিশু ৭ মাস বয়সি হওয়ার আগে 'ফোনেটিক' তথ্য বুঝে উঠতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোও ভাষার সবথেকে ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে 'ফোনেটিক'। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, শিশুরা ভাষার এই ক্ষুদ্রতম অংশটি ৭ মাস বয়স হওয়ার আগে ঠাওরই করে উঠতে পারে না। তাঁদের আরও বক্তব্য, ডিসলেক্সিয়া এবং ডেভলপমেন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডিসঅর্ডারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে 'ফোনেটিক ইনফরমেশন' বুঝে ওঠা মূল সমস্যা নয়। আসল গণ্ডগোল থাকতে পারে 'রিদমিক পারসেপশন', অন্তত তেমনই মনে করেন তাঁরা।
টুকিটাকি...
গবেষণাপত্রটির অন্যতম অথার তথা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট উষা গোস্বামির কথায়, 'সুষ্ঠু ভাষাগত বিকাশের পিছনে রিদম ইনফরমেশনের মতো জিনিস কার্যকরী রয়েছে বলেই আমরা মনে করি।' এই গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরামর্শ, শিশুদের সঙ্গে যথাসম্ভব কথা বলা দরকার মা-বাবার। নার্সারি রাইমসের মতো শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট 'স্পিচ'-ও দুরন্ত কার্যকরী হতে পারে। কারণ তাঁদের ধারণা, এসবই তাঁদের ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন তাঁরা? এ জন্য ৫০ জন শিশুর ৪ মাস, ৭ মাস এবং ১১ মাস বয়সে মস্তিষ্কের গতিবিধি রেকর্ড করেন ওই গবেষকদল। তবে এমনি এমনি নয়। একজন প্রাথমিক শিক্ষিকা ১৮ রকমের নার্সারি রাইমস পড়ে শোনাচ্ছেন, এরকম একটি ভিডিও ওই ৫০ জন শিশুকে তিনটি আলাদা বয়সে দেখানো হয়। কী ভাবে শিশুরা এই তথ্যগুলি বুঝছে, সেজন্য বিশেষ ধরনের এনকোডিং ব্যবহার করেন তাঁরা। সেখান থেকেই দেখা যায়, রিদম সংক্রান্ত তথ্য় ব্যবহার করে শিশুরা বুঝতে পারছে, একটি শব্দ কোথায় শেষ নয় এবং পরবর্তী শব্দ কোথায় শুরু হয়।
তার ভিত্তিতেই অভিভাবকদের সুরে সুর কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।