কলকাতা: ঘুরেফিরে কি সবই ক্রোমোজোমের খেলা? 'সেল' শীর্ষক জার্নালে হালেই প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের (Autoimmune Disease In Women) মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজের আশঙ্কা অন্তত ৪ গুণ বেশি যার নেপথ্যে রয়েছে X ক্রোমোজোমের 'কারিকুরি' (X Chromosome And Autoimmune Disease)। ফেব্রুয়ারির পয়ল তারিখে 'সেল' -র যে সংস্করণটি প্রকাশিত হয়, তাতেই রয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। তার পর থেকে নতুন আলোড়ন বিজ্ঞানীমহলে।


গবেষণার খুঁটিনাটি...
যত দিন যাচ্ছে, 'অটোইমিউন ডিজিজ' নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ ভাবে বললে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতি-প্রদত্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে মানবদেহের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এখান থেকেই 'অটোইমিউন ডিজিজ' -র সূত্রপাত। গবেষকদের বক্তব্য, মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের রোগের আশঙ্কা কেন পুরুষদের থেকে বেশি, তার কারণ তাঁরা জানতে পেরেছেন। অল্প কথায় বললে, মহিলাদের দেহ কী ভাবে X ক্রোমোজোমে সাড়া দেয়, তার মধ্যেই এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে।
গবেষণাটি বুঝতে হলে একবার জীবনবিজ্ঞানের গোড়ার কথা ঝালাই করে নিতে হবে। মানবদেহে দু'ধরনের লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম থাকে, X  এবং Y। এর মধ্যে মহিলাদের ক্ষেত্রে কোষে দুটি করে X  ক্রোমোজোম থাকে, পুরুষদের দেহে একটি X  এবং একটি Y ক্রোমোজোম থাকে। গবেষকদের বক্তব্য, Y ক্রোমোজোমের তুলনায় X ক্রোমোজোম অনেকটাই বড়। ফলে X ক্রোমোজোমের মধ্যে অনেক বেশি জিন থাকতে পারে যা কিনা প্রোটিনের 'কোড' হিসেবে কাজ করে। সাধারণ ভাবে দুটি X ক্রোমোজোম থাকলে, একটি 'নিষ্ক্রিয়' থাকে। অন্যটি প্রোটিন তৈরির কাজে অংশ নেয়। একসঙ্গে দুটি সক্রিয় থাকলে অত্যন্ত বেশি পরিমাণ প্রোটিন তৈরি হয়ে কোষকে 'বিহ্বল' করে ফেলতে পারে। তাই ভ্রূণ অবস্থা থেকেই মেয়েদের প্রত্যেকটি কোষের একটি  X ক্রোমোজোম 'নিষ্ক্রিয়' হয়ে যায়। 
এই 'নিষ্ক্রিয়' হওয়ার নেপথ্যে 'কারিকুরি' করে থাকে RNA-র। তবে পাশাপাশি  দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু প্রোটিন আপনা থেকেই এই ধরনের প্রক্রিয়ায় জুড়ে যায়। গবেষকদের দাবি, মহিলাদের অটোইমিউন ডিজিজের আশঙ্কা বেশি হওয়ার নেপথ্যে 'হাত' রয়েছে এই বিশাল 'RNA কমপ্লেক্স' ও প্রোটিনের। 


কী ভাবে?
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড জেনেটিক্স'-র অধ্য়াপক তথা হালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক, হাওয়ার্ড চ্যাং বললেন, ' X ক্রোমোজোমের জিনের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও এর যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর কিছু প্রভাব রয়েছে, সেটি সম্ভবত আগে প্রকাশ্যে আসেনি।' বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, যে 'RNA কমপ্লেক্স' তৈরি হয়, তাতে শরীরে এমন অ্যান্টিবডি দেখা দিতে পারে যা দেহের নিজস্ব প্রোটিনের বিরুদ্ধেই লড়তে শুরু করে দেয়। এই নিয়ে ইঁদুর ও মানুষের উপর গবেষণা চালিয়েই এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা জরুরি। যদিও যত টুকু সামনে এসেছে, তা নিয়েই তীব্র আলোড়ন বিজ্ঞানীমহলে। 


আরও পড়ুন:দেড় গুণ বড় আরেক ‘পৃথিবী’! কতদূরে ? কেউ কি আছে