নয়াদিল্লি: তীব্র দহনে সূর্যের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। লেহ্-লাদাখে যদিও পরিস্থিতি ততটাও দুর্বিসহ নয়। আর সেখানকার আকাশেই সূর্যকে ঘিরে থাকা দু'-দু'টি জ্যোতির্বলয় চোখে পড়ল। এটি একটি বিরল মহাজাগতিক ঘটনা বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (Double Sun Halo) এর রহস্য জানতে উদগ্রীব স্থানীয় মানুষজনও।


সূর্যকে ঘিরে থাকা জ্যোতির্বলয় আগেও চোখে পড়েছে। তবে সূর্যকে ঘিরে থাকতে দেখা গিয়েছে মূলত একটি উজ্জ্বল বলয়কেই। লেহ্-র আকাশে সূর্যকে ঘিরে জোড়া জ্যোতির্বলয় চোখে পড়ল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সূর্যকে ঘিরে এমন জোড়া জ্যোতির্বলয়ের আবির্ভাব মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (Leh Sun Halo)


বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সুতোর মতো, বরফের স্ফটিক সম্বলিত বিচ্ছিন্ন মেঘ অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে বরফের মেঘ তৈরি হয় বলে, তার আস্তরণও হয় পাতলা। খালি চোখে অনেক সময় দেখাই যায় না। কিন্তু ওই বরফের স্ফটিকের আকার হয় ষড়ভুজ। দেখতে একেবারে স্বচ্ছ কাচের মতো। নির্দিষ্ট কোণ বরাবর তার মধ্যে দিয়ে সূর্যালোকের প্রতিসরণ এবং প্রতিফলন ঘটে।


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেম, বায়ুমণ্ডলে স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে। জলীয় বাষ্পের পরিমাণও হয় বেশি। সেখানেই এই বরফের কণা ভর্তি মেঘ বিরাজ করে। তার ভিতর দিয়ে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ এবং প্রতিফলন ঘটলে তা উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় চোখে। এই থেকে রামধনুও তৈরি হয়। তবে জোড়া জ্যোতির্বলয়ের নেপথ্য তত্ত্ব কিছুটাজটিল।


আরও পড়ুন: Science News: ছিল ১০, এখন ২৪, ভবিষ্যতে ২৫ ঘণ্টায় একদিন হতে পারে পৃথিবীতে


এই জ্যোতির্বলয়গুলির প্রস্থ কখনও ২২ ডিগ্রি, কখনও আবার ৪৬ ডিগ্রি হয়। বরফের স্ফটিকগুলি অবিন্যস্ত অবস্থায় থাকলে, তা থেকে ২২ ডিগ্রি জ্যোতির্বলয়ের সৃষ্টি হয়। বরফের স্ফটিকগুলি অনুভূমিক ভাবে, পৃথিবীপৃষ্ঠের সমান্তরালে অবস্থান করলে, আলোর অতিরিক্ত প্রতিসরণ ঘটে, যা থেকে একটি ৪৬ ডিগ্রির জ্যোতির্বলয়ও তৈরি হয়। লেহ্-র আকাশে সেই কারণেই সূর্যকে ঘিরে থাকা জোড়া জ্যোতির্বলয় চোখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 


এই জ্যোতির্বলয় নিয়ে নানা লোককথা প্রচলিত রয়েছে। কিছু দেশে ওই জ্যোতির্বলয়কে দুর্যোগের ইঙ্গিত বলে ধরা হয়। বিজ্ঞান যদিও এই যুক্তি মানে না। চাঁদ এবং অন্য গ্রহ-নক্ষত্রকে ঘিরেও এমন জ্যোতির্বলয় তৈরি হয়। বায়ুমণ্ডলের উপাদান, অবস্থা পরখ করতে সেগুলি অধ্যয়ন করেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে আবহাওয়ার গতিবিধিও নির্ধারণ করা যায়।