নয়াদিল্লি: আন্টার্কটিকায় দিনযাপন সহজ নয় যেমন, আন্টার্কটিকায় পৌঁছনোও মুখের কথা নয়। কারণ আন্টার্কটিকায় পৌঁছতে পেরোতে হয় 'কুখ্যাত' ড্রেক প্যাসেজ। (Drake Passage) অতি বড় রোমাঞ্চপ্রিয়, সাহসী অভিযাত্রীরাও ওই জলপথ পেরনোর আগে দু'বার ভাবেন। কারণ একদিকে বিধ্বংসী ঢেউ, অন্য দিকে, প্রতিকূল আবহাওয়া, সারাবছরই বিপদসঙ্কুল থাকে ওই জলপথ। (Passage to Antarctica)


দক্ষিণ আমেরিকার কেপ হর্ন, চিলে, আর্জেন্টিনা এবং আন্টার্কটিকার দক্ষিণের শেল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ দ্বারা আবদ্ধ জলপ্রণালী এই ড্রেক প্যাসেজ। এই জলপ্রণালীতেই দক্ষিণ সাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগর। বছরের যে কোনও মাসেই অভিযানে বেরনো হোক না কেন, দুর্যোগ লেগে থাকে। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উষ্ণ ঘূর্ণিঝড়ও ঢুকে পড়ে ড্রেক জলপ্রণালীতে। ফলে উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। 


ড্রেক জলপ্রণালীর পরিবেশকে দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়, Drake Lake এবং Drake Shake. ঢেউয়ের উচ্চতা যখন ৯ থেকে ১২ মিটারে পৌঁছে যায়, তাতে Drake Shake বলা হয়। তুলনামূলক শান্ত অবস্থাকে বলা হয় Drake Lake. তবে ড্রেক জলপ্রণালীর শান্তরূপ কালেভদ্রেও চোখে পড়ে বলে মত অভিযাত্রীদের।


আরও পড়ুন: Sunita Williams: ফের মহাকাশ অভিযানে রওনা সুনীতা উইলিয়ামস, এই নিয়ে তৃতীয়বার


কিন্তু শুধুই কি জলোচ্ছ্বাস, ঢেউ এবং ঝড়ের প্রকোপ? ড্রেক জলপ্রণালীতে আরও একটি কারমে বিপজ্জনক। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিরাট বিরাট ঢেউ আছড়ে পড়ার ফলে ওই জলপ্রণালীর স্রোতে বিদ্যুৎ খেলে বেড়ায়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, ঝড় এবং জলের ঘনত্ব যেমন থাকে সেই অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে জলের প্রবাহ হয় অনুভূমিক। জলের এই তরঙ্গ শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত হয়, যা অভিযাত্রীদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।


কয়েক মাস আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ফিয়ান পল নামের এক ব্যক্তি। বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ড্রেক জলপ্রণালী হয়ে অভিযানে বেরিয়েছিলেন তিনি। ফিয়ান জানিয়েছেন, ড্রেক জলপ্রণালীর উপর দিয়ে ৬০০ মাইলের যাত্রাপথ ছিল তাঁদের। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় এমনিতেই জমে গিয়েছিলেন তাঁরা, তার উপর প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভিজে শরীরে বসে থাকতে হয়েছিল গোটা যাত্রাপথে। ফিয়ান জানিয়েছেন প্রবল ঝড়ে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। পাথরের দেওয়ালে সজোরে ধাক্কা খেলে যে অবস্থা হয়, তেমনই অবস্থা হয়েছিল তাঁদের।


তবে এই ড্রেক প্রণালী রয়েছে বলেই আন্টার্কটিকা এখনও ঠান্ডা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে বরফ গলে যায়নি বলে মত বিজ্ঞানীদের। ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার গবেষকদের মতে, ড্রেক জলপ্রণালী ৮০০ কিলোমিটার চওড়া এবং ৪০০ মিটার গভীর। জলের নীচে যে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন রয়েছে, তা বাতাসের কার্বনকে শোষণ করে নেয়। আবার দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আন্টার্কটিকা অভিমুখে এই জলপ্রণালীর উপর কোনো স্থলভূমিও নেই। ফলে উষ্ণ বাতাস সরাসরি আন্টার্কটিকায় ঢুকে পড়তে পারে না। এর ফলেই আন্টার্কটিকা ঠান্ডা রয়েছে বলে মত ইউনিভার্সিটি অফ সাউথহ্যাম্পটনের সমুদ্রবিজ্ঞানী অ্যালবার্তো নাভেরিয়া গেরাবাতো।


ড্রেক প্রণালীর নামকরণ ১৬ শতকের ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যর ফ্রান্সিস ড্রেকের নামে। ক্রীতদাস কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন তিনি। স্পেনীয়রা আবার ড্রেক জলপ্রণালীকে মার-দে-হোসেস বলে উল্লেখ করেন। স্পেনীয় নাবিক ফ্রান্সিসকো দি হোসেস ফ্রান্সিসেরও ৫০ বছর আগে ড্রেক জলপ্রণালীতে অভিযানে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।