নয়াদিল্লি: অশনি সঙ্কেত মিলেছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সবকিছু পাল্টে যাবে, আঁচ করতে পারেননি কেউ। তাই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রকে দ্রুত অবস্থান পাল্টাতে দেখে আতঁকে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানালেন, পৃথিবীর উত্তর চৌম্বক মেরু ক্রমশ রাশিয়ার দিকে সরে যাচ্ছে বেশ দ্রুত গতিতেই, যা আগে কল্পনা করা যায়নি। (Magnetic North Pole Moving)


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কানাডা থেকে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দিকে ২ হাজার ২৫০ কিলোমিটার সরে গিয়েছে পৃথিবীর উত্তর চৌম্বক মেরুর উত্তর অংশ।  এই উত্তর চৌম্বক মেরু বরাবরই চলমান, কিন্তু এত দ্রুত গতিতে তাকে অবস্থান পাল্টাতে দেখা যায়নি আগে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত উত্তর চৌম্বক মেরুর গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার হয়ে গিয়েছে। (Science News)


পৃথিবীর ভৌগলিক উত্তর মেরু এবং উত্তর চৌম্বক মেরু যদিও এক নয়। ভৌগলিক মেরু একই জায়গায় রয়েছে। অবস্থান পরিবর্তন ঘটছে উত্তর চৌম্বক মেরুর।  পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের বিন্দুটিকে উত্তর মেরু হিসেবে ধরা হয়। এই উত্তর মেরুর প্রায় ২৫০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত উত্তর চৌম্বক মেরু। গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু, যা কম্পাসের দিক নির্দেশ করে, তাকেই চৌম্বকীয় মেরু বলা হয়। দিক নির্দেশের ক্ষেত্রে এই উত্তর চৌম্বক মেরুর গুরুত্ব অপরিসীম। কম্পাস থেকে আধুনিক কালের GPS, সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় এই চৌম্বক মেরুর দ্বারা। 


অর্থাৎ উত্তর চৌম্বক মেরুর অবস্থান বদলে গেলে, পৃথিবীর সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যাবে। সাগর-মহাসাগরে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়বে জাহাজ, ডুবোজাহাজ। আকাশে বিমান ভুল দিশায় এগোবে। হাতে হাতে স্মার্টফোন উঠে গেলেও, তার মধ্যে থাকা গুগল ম্যাপ বা অন্য ম্যাপও সঠিক দিক নির্দেশ করতে পারবে না। GPS-ও আর কাজ করবে না সঠিক ভাবে। নতুন চৌম্বক মডেল তৈরি করতে হবে। ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে-র ফিল্ড মডেলার উইলিয়াম ব্রাউনের কথায়, "বিমান, নৌকা, ডুবোজাহাজ, সবকিছুর উপর প্রভাব পড়বে।" বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকে উত্তর চৌম্বক মেরু ৬৬০ কিলোমিটার সরে যাবে। সেক্ষেত্রে ২০৪০ সাল নাগাদ এখনকার পূর্বদিকে মুখ ঘুরে যাবে চুম্বকের, অর্থাৎ এখনকার পূর্বদিক আগামী দিনে উত্তর দিকে পরিণত হবে। শুধু প্রযুক্তিগত ভাবেই সহায়ক নয়, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ক্ষতিকর সৌর বিকিরণ থেকেও আমাদের রক্ষা করে। চৌম্বকক্ষেত্র না থাকলে ক্ষতিকর বিকিরণ সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়ত, যার প্রভাব থেকে কেউ রক্ষা নেই কারও।


পৃথিবীর দক্ষিণ চৌম্বক মেরুরও দিক পরিবর্তন ঘটছে। আন্টার্কটিকা হয়ে পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে সেটিও। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ৩ লক্ষ বছর অন্তর এমন পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের। কিন্তু শেষ বার, আজ থেকে প্রায় ৭ লক্ষ ৮০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের অবস্থান পাল্টায়। এতদিন পর, হঠাৎ করে কেন দ্রুত গতিতে অবস্থান পাল্টাতে শুরু করল উত্তর চৌম্বক মেরু? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর অন্তঃস্থলে থাকা তরল লোহা এদিক ওদিক প্রবাহিত হতে থাকে, তাতেই চৌম্বকক্ষেত্রের অবস্থান পাল্টে যায়। 


পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র মূলত অন্তঃস্থলে থাকা গনগনে তরল লোহার স্রোত এবং অন্যান্য পদার্থ দ্বারা গঠিত। সময়ের সঙ্গে সেই স্রোতের দিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এর ফলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রেরও দিক পাল্টায়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যায়। ২০১৬ সালে লাতিন আমেরিকার উত্তর দিক ও প্রশান্ত মহাসগাররে পূর্ব দিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরে গিয়েছিল পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। এবার আরও দ্রুত গতিতে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক পাল্টাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।