নয়াদিল্লি: মুহুর্মুহু ভূমিকম্পে বিরতি নেই। এখনও কেঁপে চলেছে ছবির মতো সাজানো দেশ গ্রিস। আতঙ্কে প্রাণ হাতে করে ঘর ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। কারণ বার কয়েক নয়, গক ২৭ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত সেখানে ১০০০ বারের বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। একটি-দু’টি দ্বীপ থেকে ক্রমশ কম্পনের বিস্তার ঘটছে দেশের অন্যত্র। (Greece Earthquake Swarm)
প্রতি ১০ মিনিট অন্তর ভূমিকম্প আছড়ে পড়ছে গ্রিসে। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ঘোরাফেরা করছে ৩ থেকে ৪.৯-এর মধ্যে। পর্যটক অধ্যুষিত স্যান্টোরিনি থেকে আমোরগস এবং সিক্লাডিসের উভয় তীরে ঘন ঘন কম্পন অনুভূত হচ্ছে। আর তাতেই গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দ্বীপগুলিতে জারি হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। (Earthquakes in Greece)
এজিয়ান সাগরের নীচেই ভূমিকম্পের উৎসস্থ বলে মত বিজ্ঞানীদের। বিমান-জাহাজে চেপে দলে দলে লোকজন ঘর ছাড়ছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় গ্রিসের ১০ হাজার মানুষ নিজেদের বাড়ি ছেড়েছেন। কারণ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে। যেভাবে ঘটনাক্রম এগোচ্ছে, তাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরাও।
Geodynamic Institute জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ৩-এর নীচে তীব্রতা, এমন ৪৪০টি ভূমিকম্প হয়েছে। ৫.১ তীব্রতায়ও কেঁপে উঠেছে গ্রিসের মাটি। বড় ভূমিকম্পের পর আফটার শক হিসেবে বারংবার মাটি কেঁপে ওঠার ঘটনা ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছুই ঘটেনি। তাহলে কি আগামীতে ঘটবে? সেই আশঙ্কাই দানা বাঁধছে।
বিশেষ করে স্যান্টোরিনি দ্বীপের পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সেটি পর্যটকদের কাছে বরাবর জনপ্রিয়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে ভিড় করেন। স্যান্টোরিনিতেই Kolumbo আগ্নেয়গিরিটি রয়েছে। স্যান্টোরিনি দ্বীপটি তাই ভূমিকম্পপ্রবণ বলে পরিচিত। তবে আগ্নেয়গিরি না কি জলের নীচে টেকটোনিক পাতের আনাগোনা ভূমিকম্পের জন্য দায়ী, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।
গ্রিস এমনিতে ইউরোপের অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ দেশ হিসেবেই পরিচিত। আফ্রিকান এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সীমার উপর অবস্থান করছে দেশটি। আফ্রিকান পাতটি আবার ইউরেশিয়ান পাতের নীচে ঢুকে গিয়েছে। সেই পাতটি নড়াচড়া করলেই কেঁপে ওঠে গ্রিস। সমুদ্রের নীচে সেখানেই নড়াচড়া হচ্ছে এবং তা থেকেই গ্রিস কেঁপে উঠছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। আবার অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ভূমিকম্পের ফলে গ্রিসের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ইতিহাসও রয়েছে। ৩৫০০ বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ১৬২০ সালে বিধ্বংসী অগ্ন্যুৎপাতে সাক্ষী হয় গ্রিস। সেই সময় স্যান্টোরিনির সিংহভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ওই অগ্ন্যুৎপাতের জেরেই মিনোয়ান সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ থেকে বিজ্ঞানীরা। পাঁচের দশকেই শেষবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল গ্রিসে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে মুহুর্মুহু ভূমিকম্প আছড়ে পড়ছে গ্রিসে, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিজ্ঞানীরা।