নয়াদিল্লি: মহাকাশ অভিযানে ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছে একাধিক বেসরকারি সংস্থা। গন্তব্য হিসেবে চাঁদকেই বেছে নিয়েছে তাদের অধিকাংশ। এর আওতায়, এই প্রথম চাঁদের মাটি ছুঁতে চলেছে কোনও বেসরকারি সংস্থা চন্দ্রযান। ইতিমধ্যেই চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে আমেরিকার বেসরকারি সংস্থার Nova-C ল্যান্ডার, তার হাত ধরেই ৫০ বছর পর ফের চাঁদের মাটি ছুঁতে চলেছে আমেরিকা। (Nova-C Lander)


ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা SpaceX, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি সংস্থা Intuitive Machines-এর চন্দ্রযান Nova-C Lander উৎক্ষেপণ করে।  Nova-C ল্যান্ডারটির ডাক নাম দেওয়া হয়েছে ওডিসাস (Odysseus)। ছয়টি পা বিশিষ্ট চন্দ্রযানটির ল্যান্ডার, চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯২ কিলোমিটার উঁচুতে একটি বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রবেশ করে গিয়েছে। (SpaceX Lander)


Nova-C ল্যান্ডারটি রোবট-চালিত। সব ঠিক থাকলে, নামতে নামতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় চাঁদের নাটি ছোঁবে সেটি। চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ মেরুর মাটি ছোঁবে Nova-C. আমেরিকার সময় অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা বেজে ৪৯ মিনিটে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা তার। অর্থাৎ ভারতের হিসেবে আর মাত্র ১২ ঘণ্টা বাকি। বেসরকারি সংস্থার চন্দ্রযান হলেও, আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA)-র ছ'টি পেলোড রয়েছে। চাঁদের পরিবেশ সক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে তাতে বসানো NASA-র যন্ত্রপাতি। সেই সব তথ্যের উপর নির্ভর করে আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর কাজে হাত দেবে NASA. 



আরও পড়ুন: LignoSat Probe: ক্ষতি হবে না পৃথিবীর, মহাকাশে হিমচাঁপা কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে জাপান


এখনও পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে Nova-C. চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে Malapert A অবস্থানে অবতরণ করবে সেটি, যা Malapert গহ্বর সংলগ্ন উপগ্রহ অবতরণের জায়গা হিয়েবে চিহ্নিত। ৬৯ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ওই গহ্বরের বিস্তার। চাঁদের দক্ষিণ মেরুবিন্দু থেকে ওই জায়গার দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই অবস্থান করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র পাঠানো চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'। ভারতের চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করে, চাঁদের বুকে ওই জায়গাটির নামকরণ হয়েছে 'শিবশক্তি পয়েন্ট'। তার কাছাকাছিই নামবে Nova-C.


এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনও বেসরকারি সংস্থার মহাকাশযানকে চাঁদের বুকে অবতরণ করানোর কাজে যুক্ত হল NASA. (SpaceX Moon Lander) এর আগে, জানুয়ারি মাসে Falcon-9 রকেটে চাপিয়ে Nova-C ল্যান্ডারটি উৎক্ষেপণের কথা ছিল। পরে সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ল্যান্ডারের প্রোপালসন সিস্টেমে থাকা তরল মিথেনের তাপমাত্রার ওঠাপড়া চোখে পড়ে। তাই প্রথমে সেই সমস্যার সমাধানে হাত দেয় SpaceX. এর পর বৃহস্পতিবার ভোর ভোর NASA-র কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সেটির উৎক্ষেপণ হয়। 


গত ৮ জানুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয়  Astrobiotic Technology সংস্থার মহাকাশযান ভালকান. ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল Peregrine ল্যান্ডারটির। মোট ১৫টি পেলোড নিয়ে রওনা দিয়েছিল সেটি, যার মধ্যে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, NASA-র যন্ত্রাংশের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কিছু পেলোড ছিল। কিন্তু গোড়া থেকেই সমস্যা দেখা দেয় তাতে। উৎক্ষেপণের সময়ই সৌর প্যানেলে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। উৎক্ষেপণের পর আবার জ্বালানি চুঁইয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। তাতেই পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়ার লক্ষ্যে ইতি পড়ে।