নয়াদিল্লি: মহাকাশ অভিযানে নজির সৃষ্টির পথে জাপান। মহাশূন্যে কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে তারা। শীঘ্রই সেটির উৎক্ষেপণ হবে বলে খবর। হিমচাঁপা গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ওই কৃত্রিম উপগ্রহ (LignoSat Probe)। সেটি এতটাই মজবুত তার গঠন যে  একচুলও ফাটল ধরার অবকাশ নেই। চলতি বছরেই সেটি মহাকাশে প্রেরণ করা হবে বলে খবর। (Wooden Satellite)


পরিবেশবান্ধব মহাকাশযান এবং কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছিল জাপান। ধাতুর পরিবর্তে কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কাজে হাত দেয় তারা। সম্প্রতি সেই কাজে হাত দিয়ে সাফল্য পেয়েছে জাপান। কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই অসাধ্য সাধন করেছেন। কাষ্ঠ সংস্থা সুমিতোমো ফরেস্ট্রি ওই কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির জন্য হিমচাঁপা গাছের কাঠ সরবরাহ করেছে তাঁদের।


আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের গবেষণায় একাধিক বার কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহের সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে দেখাচ্ছে জাপান। কাঠ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহের মডেলের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা, যার নাম রাখা হয়েছে LignoSat Probe. জাপানের মহাকাশচারী তাকাও দোই বলেন, "পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করলে সব কৃত্রিম উপগ্রহই পুড়ে যায়, তা থেকে অ্যালুমিনিয়ামের কণা ছড়িয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে বহু বছর ভেসে থাকে সেগুলি, যা পৃথিবীর পরিবেশকেও প্রভাবিত করে।"


আরও পড়ুন: ERS-2 Satellite: মানবজাতির সেবায় মহাশূন্যে ৩০ বছর, প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দেহত্যাগ এই কৃত্রিম উপগ্রহের


সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কাজে হাত দেয় জাপান। বিভিন্ন ধরনের কাঠ নিয়ে চলে পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত মহাকাশে থাকার উপযুক্ত হিসেবে পরীক্ষায় উতরে যায় হিমচাঁপা গাছের কাঠ। কারণ ওই কাঠ সহজে ক্ষয়ে যায় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় না আবার ভরেরও পরিবর্তন হয় না তেমন।


এর পর ISS-এ ওই হিমচাঁপা কাঠ পাঠানো হয়। সেখানে এক বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। তার পর ওই কাঠ আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হয়। সামান্য ঘর্ষণ ছাড়া সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি কাঠটি। তার পরই কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কাজ শুরু হয়। এই কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কোজি মুরাতা। তাঁর দাবি, মহাকাশে অক্সিজেন নেই। তাই কাঠের কৃত্রিম উপগ্রহে আগুন ধরার সম্ভাবনা নেই।


মুহুর্মুহু মহাকাশ অভিযান নিয়ে সম্প্রতি জউদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা কৃত্রিম উপগ্রহগুলি থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষণ ছড়াচ্ছে যেমন, তেমনই ওজোন স্তরেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি নেই। কাঠের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে নির্গত জীবাণুবিয়োজিত উপাদান সহজেই পরিবেশে মিশে যেতে পারে। তাই এই উদ্যোগ।