দেহরাদূণ: প্রকৃতির রোষে ফের ছারখার দেবভূমি উত্তরাখণ্ড। রাক্ষুসে ঢেউয়ের গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। হড়পা বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, রাস্তাঘাট। এখনও পর্যন্ত পাঁচটি দেহ উদ্ধার করা গেলেও, এখনও শতাধিক মানুষ নিখোঁজ বলে খবর। এতবড় বিপর্যয়ের জন্য অতিবৃষ্টি, মেঘভাঙা বৃষ্টিকে দায়ী করা হলেও, সেই দাবি মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, মোঘভাঙা বৃষ্টির জন্য নয়, হয় হিমবাহ ধসে পড়ে, নয়ত হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদ ফেটে গিয়ে এত বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে। (Uttarakhand Disaster)
স্যাটেলাইট ও আবহজনিত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখে এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, মেঘভাঙা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। পার্বত্য অঞ্চলে হয় হিমবাহ ধসে পড়েছে, নয়ত গোটা হ্রদ ফেটে গিয়েছে, যা রাক্ষুসে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় মৌসম ভবনের রেকর্ডও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। কারণ যে সময় এই বিপর্যয় ঘটে, সেই সময় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ন্যূনতম। মঙ্গলবার হর্ষিলে ৬.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ৯ মিলিমিটার। ভাটওয়ারিতে ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় সাকুল্যে। ফলে মেঘভাঙা বৃষ্টির তত্ত্ব খাটছে না। (Uttarakhand Flash Floods)
TOI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে IMD-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট রোহিত থপলিয়াল বলেন, “দুর্গত এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় অতি সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরকাশীতে জেলা সদর দফতরে যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়, তার পরিমাণও ছিল মাত্র ২৭ মিলিমিটার।” তাঁর এক সহযোগী বলেন, “এই পরিমাণ বৃষ্টি থেকে বন্যা হয় না, এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় না। হিমবাহ ধসে পড়ে বা বাঁধ ভেঙে ফেটে পড়া হ্রদ থেকে এমনটা ঘটতে পারে।”
স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কিছুটা উপরে দু’টি হিমবাহ এবং কমপক্ষে দু’টি হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদ দেখে গিয়েছে। রোহিত বলেন, “ক্ষীরগড় ধারার ঠিক উপরেই একটি হিমবাহ রয়েছে। হয় ওই হিমবাহ ধসে, অথবা হ্রদ ফেটে বিপুল পরিমাণ জলধারা আছড়ে পড়ে, যা থেকে এত ব্যাপক ধ্বংসলীলা চলে।” ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চামোলির রাইনি বিপর্যয়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেবার ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপরিভাগে হিমবাহ ধসে পড়ে, যাতে তপোবন বিষ্ণুগড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শতাধিক মানুষ মারা যান।
Wadia Institute of Himalayan Geology-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদের সঁখ্যা ১২৬৬। কোনওটির আকার ছোট, কোনওটি আবার বৃহদাকার এর মধ্যে ১৩টি হ্রদকে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক বসে চিহ্নিত করেছে ভারতের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ। পাঁচটি হ্রদকে আবার চিহ্নিত করা হয়েছে অতি বিপজ্জনক হিসেবে। মাটি থেকে অত উপরে হিমবাহ গলতে গলতে হ্রদের জল যখন বিপদসীমা পেরিয়ে যায়, সেই সময়ই এমন বিপদ ঘটে। হিমবাহ গলার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেন বিজ্ঞানীরা।