নয়াদিল্লি: মহাজগৎকে ঘিরে বেসরকারি সংস্থাগুলির তৎপরতা বেড়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। এবার চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিল প্রথম বেসরকারি মহাকাশযান। ৮ জানুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে Astrobiotic Technology সংস্থার মহাকাশযান। সেটির উৎক্ষেপণ করে United Launch Alliance-এর Vulcan রকেট। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা তাদের Perefrine Mission-1 ল্যান্ডারের। তবে ওই ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ নিয়ে রওনা দিয়েছে বলে সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। (Vulcan Rocket to Moon)
বেসরকারি সংস্থার মহাকাশযান হলেও, Perefrine Mission-1 ল্যান্ডার যদি চাঁদের মাটি ছোঁয়, তাহলে ফের ইতিহাস গড়বে আমেরিকা। কারণ ছয় এবং সাতের দশকে অ্যাপোলো অভিযানের পর এই প্রথম তাদের দেশ থেকে রওনা দেওয়া কোনও মহাকাশযান চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে। Vulcan রকেটে কোনও মহাকাশচারী সওয়ার নেই। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র পাঁচটি যন্ত্র চাঁদের বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটি। (Private Moon Mission)
পৃথিবীর চারিদিকে বেশ কয়েক বার চক্কর কাটার পর, ছিটকে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে ওই Vulcan রকেট। প্রথমে চাঁদকেও বার কয়েক প্রদক্ষিণ করবে। তার পর চাঁদের বুকে Sinus Viscositatis এলাকায় নামবে স্বয়ংক্রিয় ওই ল্যান্ডার, যে এলাকা ‘আঠাল উপসাগর’ নামেও পরিচিত। ওই এলাকায় লাভার স্রোত বয়ে যেত বলেই এমন নাম। চাঁদের বাইরের আবরণ, মাটিতে মিশে থাকা থার্মাল ও হাইড্রোজেন উপাদান, চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা চালাবে।
আরও পড়ুন: Space Meal: জল ছাড়াই চাষ সম্ভব মহাশূন্যে, পুষ্টির জোগানও মিলবে, নভোচারীদের জন্য এল ‘Space Meal’
কিন্তু এই অভিযান নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রথমত, উৎক্ষেপণের সময়ই কিছু সমস্যা দেখা দেয়। জানা যায়, রকেটে বসানো সোলার প্যানেলে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দিয়েছে। এর পাশাপাশি, মানবদেহের অবশিষ্টাংশ, DNA বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও বিতর্ক শুরু হয়েছে। NASA-র যন্ত্রাংশের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কিছু পেলোড রয়েছে ওই Peregrine ল্যান্ডারে, যার মধ্যে রয়েছে Celestis, Elysium সংস্থার তরফে পাঠানো মানবদেহের অবশিষ্টাংশ। এমন ৪০ জন মানুষের অবশিষ্টাংশ চাঁদের বুকে স্মারক হিসেবে রেখে দিতেই এমন উদ্যোগ, যার মধ্যে কল্পবিজ্ঞানের লেখক আর্থার সি ক্লার্কের অবশিষ্টাংশও রয়েছে। একটি পৃথক পেলোডও রয়েছে, যাতে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট-সহ ২০০ জনের অবশিষ্টাংশ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে NASA এবং আমেরিকা সরকারকে চিঠিও লিখেছেন আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের নিয়ে তৈরি Navajo Nation-এর প্রেসিডেন্ট। তাতে বলা হয়েছে, চাঁদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগ রয়েছে বহু সংস্কৃতির। দেবতা হিসেবে চাঁদকে পুজো করেন অনেকে। সেই চাঁদের বুকে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পাঠিয়ে তার মাটিকে অপবিত্র করা হচ্ছে। তবে NASA-র দাবি, এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল না। তবে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মহাশূন্যে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পাঠানো নিয়ে ১৯৯৯ সালেই NASA-র সঙ্গে চুক্তি হয় Navajo Nation-এর, যার আওতায় এই ধরনের কোনও পরীক্ষা করতে গেলে আলোচনা করতে হবে আগে।
শুধু আধ্যাত্মিক যোগ তুলে ধরেই নয়ে, চাঁদের বুকে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ নিয়ে যাওয়া কতটা ক্ষতিকর, তার বৈজ্ঞানিক কার্যকারণও তুলে ধরেছেন অনেকে। চাঁদের মাটিতে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ পৌঁছলে সেখানে দূষণ ছড়াবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। কিন্তু রকেট উৎক্ষেপণকারী বেসরকারি সংস্থার দাবি, চাঁদের মাটিতে মিশবে না মানবদেহের অবশিষ্টাংশ। পেলোডের মধ্যেই থাকবে সেগুলি। কিন্তু এই গোটা বিতর্কে NASA-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযানের দায়িত্বে তারা না থাকলেও, এতে তাদেরও বিনিয়োগ রয়েছে। তাই বিতর্কের মুখে তারা দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে বলে অভিযোগ।