নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটি ছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। সূর্যের উপর নজরদারিও শুরু হচ্ছে। এবার আরও দূরের কথা ভাবছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. মহাজগতে আজও রহস্য হয়ে বিরাজ করছে যে কৃষ্ণগহ্বর, এবার তার সারতত্ত্ব উদঘাটনে উদ্যোগী হল তারা। নতুন বছরের প্রথম দিনই সেই কাজে অভিষেক ঘটছে ভারতের। ১ জানুয়ারি অ্যাডভান্স অ্যাস্ট্রনমি অবজার্ভেটরির উৎক্ষেপণ করবে ISRO, যা মহাশূন্যে কৃষ্ণগহ্বর এবং নিউট্রন নক্ষত্রগুলির উপর গবেষণা চালাবে। কৃষ্ণগহ্বর এবং নিউট্রন নক্ষত্রের উপর নজরদারি চালানো দ্বিতীয় দেশ হিসেবে গন্য হবে ভারত। (ISRO News)
জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে নক্ষত্রের মৃত্যু হয়। নিজের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিরই শিকার হয়। তার পর যা পড়ে থাকে, তা কৃষ্ণগহ্বর বা নিউট্রন নক্ষত্র। বৃহদাকার নক্ষত্রের মৃত্যুতে কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হয়। তুলনামূলক ছোট আকারের নক্ষত্রের মৃত্যুতে সৃষ্টি হয় নিউট্রন নক্ষত্রের, যা আসলে নিউট্রনে সমৃদ্ধ, অতি ঘনত্বের মহাজাগতিক বস্তু হিসেবে বিরাজ করে। সেই কৃষ্ণগহ্বর এবং নিউট্রন নক্ষত্রের উপর নজরদারি চালাতেই এবার কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে ISRO. (Science News) অন্ধ্রপ্রদেশের সতীশ ধওয়ন স্পেস স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ হবে।
নতুন বছর ২০২৪-র প্রথম দিন, অর্থাৎ আগামী ১ জানুয়ারি সেই লক্ষ্যে XPoSAT তথা X-ray Polarimeter Satellite উৎক্ষেপণ করবে ISRO. Polar Satellite Launch Vehicle-এ চাপিয়ে ওই মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণ হবে। এই নিয়ে ৬০তম উড়ান Polar Satellite Launch Vehicle-এর। XPoSAT মহাকাশযানটিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি, ৪৪ মিটার দীর্ঘ এবং ২৬০ টন ওজনের এই রকেটটি আরও ১০ রকম পরীক্ষাপ সরঞ্জাম বয়ে নিয়ে যাবে।
আইআইটি বম্বের জ্যোতির্পদার্থবিদ বরুণ ভালেরাও বলেন, "২০০১ সালে NASA-র IXPE অভিযানের পর দ্বিতীয় উন্নতমানের অভিযান হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বর অভিমুখে। মৃত নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশের পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা হবে এই অভিযানের মাধ্যমে।"
ভালেরাও জানিয়েছেন, এক্স রে ফোটন ব্যবহার করে, মৃত নক্ষত্র থেকে নির্গত বিকিরণ পরীক্ষা করে দেখা হবে। গোটা ব্রহ্মাণ্ডে কৃষ্ণগহ্বরের অভিকর্ষ শক্তিই সবচেয়ে বেশি। মহাজাগতিক সমস্ত বস্তুর মধ্যে ঘনত্বও সবচেয়ে বেশি নিউট্রন নক্ষত্রের। মহাশূন্যে এদের প্রভাব খতিয়ে দেখা হবে। নিউট্রন নক্ষত্রগুলির ব্যাস যদিও ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই হয়, কিন্তু মিছরির সমান তাদের এক টুকরোও যদি পৃথিহীতে আনা হয়, তার ওজন হবে মাউন্টএভারেস্টের সমান।
গত এক বছরেরও কম সময়ে এই নিয়ে তৃতীয় মহাকাশ অভিযান ISRO-র। প্রথমে ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে ISRO। তার পর ২ সেপ্টেম্বর সূর্যের উপর নজরদারি চালাতে পাঠানো হয় Aditya-L1 সৌরযান। টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এআর রাও জানিয়েছেন, তা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে X-ray Polarisation-এর ব্যবহার একেবারে নতুন। পরতে পরতে চমক অপেক্ষা করছে।
তবে কৃষ্ণগহ্বর অভিযানেও খরচ সীমিতই। XPoSat মহাকাশযানটি তৈরিতে খরচ পড়েছে ২৫০ কোটি টাকা বা ৩০ মিলিয়ন। সেই নিরিখে NASA-র IXPE অভিযানে খরচ পড়েছিল ১৮৮ মিলিয়ন ডলার বা ১৮.৮ কোটি ডলার। NASA-র IXPE-র আয়ু ছিল দু'বছর। আগামী পাঁচ বছরেরও বেশি সময় মহাশূন্যে থাকবে ISRO-র XPoSat মহাকাশযানটি। বেঙ্গালুরুর রমণ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ পাল এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানিয়েছেন, মহাজাগতিক বস্তুসমূহের অন্দরে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র কতটা সক্রিয়, তা খতিয়ে দেখা হবে। অভিকর্ষীয় শক্তি, তেজস্ক্রিয়তা এবং উপাদাবেক চরিত্রও পরীক্ষা করে দেখা হবে এই অভিযানে।