নয়াদিল্লি: শুভ কাজ হোক বা ভবিষ্যতের সঞ্চয়, সব ক্ষেত্রেই সোনা সবসময় এগিয়ে। কিন্তু এই সোনা মানুষের তৈরি নয়, পৃথিবীর দেওয়া উপহার। পৃথিবীবক্ষে সঞ্চিত সম্পদ ভেঙে, গলিয়েই তৈরি হয় গহনা। কিন্তু এই সোনার উৎপত্তি কী থেকে? এবার তার সারতত্ত্ব খুঁজে বের করেতে উদ্যোগী হলেন বিজ্ঞানীরা। আকারে ছোট কিন্তু বেশি ঘনত্বের, নিউট্রন সমৃদ্ধ, দু'টি মৃত নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষ থেকেই সোনার সৃষ্টি। কিন্তু সেই বিস্ফোরণের সেই মুহূর্তে ঠিক কী ঘটে, কোন প্রক্রিয়ায় সোনার উৎপত্তি হয়, এবার তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য হাতে পেতে উদ্যত হলেন বিজ্ঞানীরা। (Birth of Gold)


দুই নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে তীব্র আলো বিচ্ছুরিত হয়। ২০১৭ সালের ১৭ অগাস্ট এমন উজ্জ্বল আলোয় ঢেকে যায় পৃথিবীর আকাশও, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে Kilonova.ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর গ্র্য়াভিটেশনাল ফিজিক্স এবং ইউনিভার্সিটি অফ পটসড্যামের বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যার মডেল ব্যবহার করে ওই বিস্ফোরণের খুঁটিনাটি পরখ করে দেখছেন। পরখ করে দেখা হচ্ছে ওই বিস্ফোরণ থেকে নির্গত অভিকর্ষীয় তরঙ্গ, তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলিকেও। (Kilonova Explosions)


কোনও নক্ষত্রের জ্বালানি যখন ফুরিয়ে যায়, সেটি নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। এর পর ওই নক্ষত্রের অন্তঃস্থল ধীরে ধীরে ক্ষয় পেতে শুরু করে, ছাইয়ের মতো উড়ে যেতে শুরু করে বাইরের দিকের স্তরও। অন্তঃস্থলের যে অংশটি রয়ে যায়, সেটির ঘনত্ব আরও বেড়ে যায়। ওই অবস্থায় মিছরির মতো তার একটি টুকরোও যদি পৃথিবীতে বয়ে আনা যায়, তার ওজন হবে আমেরিকার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মতো ৩০০০টি ইমারতের সমান।  শুধুমাত্র নিউট্রনেই সমৃদ্ধ হয় না, মৃত নক্ষত্রের পড়ে থাকা অন্তঃস্থলে প্রোটনও থাকে। 


আরও পড়ুন: SLIM Moon Mission: জড়িয়ে চন্দ্রযান-৪ অভিযানের ভবিষ্যৎ, নতুন বছরে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারবে কি SLIM?


এর পর এমন দু'টি নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাধে, নিউট্রন সমৃদ্ধ পদার্থ মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। মহাশূন্যে থাকা অণুগুলি ওই নিউট্রনকে শুষে নিতে দেরি করে না এক মুহূর্ত। এর ফলে যে ভারী উপাদানের সৃষ্টি হয়, সেগুলি স্থিতিশীল প্রকৃতির হয় না। বরং ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে তা থেকে সোনা এবং ইউরেনিয়ামের সৃষ্টি হয়। এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই গবেষণা শুরু হয়েছে। 


২০১৭ সালে আকাশে যে আলোর ছটা দেখা গিয়েছিল, সেটিকে GW170817 নামে চিহ্নিতক করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, পৃথিবী থেকে ১৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু'টি মৃত নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেই থেকেই সোনা, ইউরেনিয়াম এবং অন্য ভারী উপাদানগুলির সৃষ্টি বলে মত বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীতে সোনা এল কোথা থেকে, এই গবেষণা থেকে সেই সংক্রান্ত তথ্যও মিলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।


এর আগে, ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহামের গবেষক ম্যাট নিচোল জানিয়েছিলেন, এরকম বিস্ফোরণ থেকে পৃথিবীর মোট ভরের তুলনায় ১০০০ গুণ ভারী উপাদান সৃষ্টি হওয়ার নজিরও রয়েছে। অর্থাৎ এই Kilonova বিস্ফোরণকে মহাশূন্যে বিরাজমান সোনার কারখানা বলা চলে।