কলকাতা: সূদূর উত্তর মেরু প্রদেশ (Arctic Circle), পৃথিবীর একেবারে উত্তরভাগ। যেখানে সারা বছরই থাকে বরফের সাম্রাজ্য। সেই বরফের দেশেরই বাসিন্দা ইনি। টিভিতে-সিনেমার পর্দাতেও দেখা যায় এদের। আকারে বিশাল মেরু ভালুক (Polar Bear) এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। তার জন্য মূলত দায়ী জলবায়ু বদলের সমস্যা।


মেরু ভালুকের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা মাথায় রেখেই প্রতিবছর ২৭ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মেরু ভালুক দিবস (International Polar Bear Day)। বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warning), মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্রে ধাক্কা খাওয়ার অন্যতম কারণ। ফলে এদিন সেই বিষয়গুলি নিয়েও সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা করা হয়।


মেরু অঞ্চল মেরু ভালুকে স্বাভাবিক বাসস্থান। জলবায়ু বদলের জন্য মেরু প্রদেশের বরফ কমছে, যার ফলে ক্রমশ বাসস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে মেরু ভালুকের। জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে খাবারেও টান পড়ছে। এমন সঙ্কটের পরিস্থিতিতে মেরু ভালুকের সংরক্ষণের বার্তা দেওয়া হয় এই দিনে। বিশ্বের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার তরফেও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


সঙ্কটে মেরু ভালুক:
International Union for Conservation of Nature (IUCN) মেরু ভালুককে সঙ্কটাপন্ন (vulnerable) প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করেছে। উত্তর মেরু প্রদেশে, কানাডার উত্তরভাগে, আমেরিকার আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, রাশিয়ার উত্তরভাগে, নরওয়ে-এই কটি জায়গায় মেরু ভালুকের দেখা মেলে। জলবায়ু বদলের বিপদ থেকে মেরু ভালুককে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাজ চলছে। ১৯৭৩ সালে মেরু ভালুক পাওয়া যায় এমন দেশগুলির মধ্যে International Agreement on the Conservation of Polar Bears and their Habitat- এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বেলাগাম শিকার নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপও হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে তৈরি হয় Polar Bear International নামের একটি সংস্থা যেটি বিশ্বজুড়ে মেরু ভালুক সংরক্ষণের কাজ করে চলেছে। 


চমকে দেওয়া তথ্য:



  • আয়তনে বিশাল হয় মেরু ভালুক। পূর্ণবয়স্ক মেরু ভালুক অন্তত আড়াই মিটার লম্বা হতে পারে। ওজন ছুঁতে পারে অন্তত ৭০০ কেজি। বিশ্বের বৃহত্তম মাংশাসী প্রাণী (Carnivores) মেরু ভালুক।

  • মেরু ভালুককে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের (Marine Mammals) শ্রেণিতে ফেলা হয়। কারণ খাবারের সন্ধানে তারা তাদের জীবনের সিংহভাগই জলে ও বরফে কাটায়। ভালুকদের মধ্যে একমাত্রা মেরু ভালুকই marine Mammals গোত্রের।

  • ধবধবে সাদা পশমে ঢাকা থাকে মেরু ভালুকের দেহ। কিন্তু আদতে ওই ভালুকের ত্বক ঘন কালো রঙের। আলো প্রতিফলন করে বলে মেরু ভালুকের পশম সাদা রঙের দেখায়।

  • অসম্ভব দক্ষ সাঁতারু হয় মেরু ভালুক। টানা অনেকক্ষণ সাঁতার কাটতে পারে। বড় আকৃতির থাবা সাঁতার কাটতে সুবিধা করে দেয়। আর পিছনের পা রাডারের মতো কাজ করে।

  • দুরন্ত ঘ্রাণশক্তির অধিকারী। বরফের আস্তরণ পেরিয়েও এরা শিকারের গন্ধ পায়।

  • এত বিশাল আকৃতির হলেও শিকার কিন্তু ভীষণ কষ্টসাপেক্ষ। একটি মেরু ভালুকের জীবনের অর্ধেক সময় শিকারের পিছনেই খরচ হয়। মূলত সিল এদের শিকার। পাশাপাশি অন্য ছোট স্তন্যপায়ী, মাছ, পাখিও শিকার করে।

  • এখন বিশ্বে মেরু ভালুকের সংখ্যা ২৬ হাজার। ১৯টি এলাকায় বিভক্ত তাদের বাসস্থান।


আরও পড়ুন: কোন কোন ধরনের কাজ কেড়ে নিতে পারে চ্যাটজিপিটি? দুশ্চিন্তা বিশ্বে