নয়াদিল্লি: পৃথিবীর বুকে এমনিতেই যুদ্ধ, সংঘর্ষ চলছে। এবার কি মহাশূন্য থেকে আঘাত নেমে আসতে চলেছে? এমনই বিপদের সম্ভাবনা উস্কে দিলেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী আবি লোব। সূর্যের দিকে ধাবমান একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর দিকে এই মুহূর্তে নজর সকলের। এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত তৃতীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু সেটি। কিন্তু অধ্যাপক আবির দাবি, সেটি কোনও ধূমকেতু নয়। আসলে সেটি ভিনগ্রহীদের কৃত্রিম যান। (Science News)

যে আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুকে ঘিরে এত চর্চা, গত ১ জুলাই সেটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। সেটির নাম রাখা হয়েছে 3I/ATLAS. বিজ্ঞানীদের একাংশ জানিয়েছেন, 3I/ATLAS আয়তনে প্রায় ১১.২ কিলোমিটার চওড়া। ঘণ্টায় ২ লক্ষ ১০ হাজার কিলোমিটার গতিতে সেটি সূর্যের দিকে ধাবমান এই মুহূর্তে। (Interstellar Object 3I/ATLAS)

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 3I/ATLAS-কে আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু বলেই চিহ্নিত করেছে। সৌরজগতের বাইরের কোনও নক্ষত্রের অংশ সেটি, এই মুহূর্তে আমাদের সৌরজগতের দিকে ধাবমান বলে জানিয়েছে তারা। NASA জানিয়েছে, 3I/ATLAS-কে ঘিরে রয়েছে বরফ, ধুলো এবং গ্যাসের আস্তরণ। (Alien Invasion)

কিন্তু হার্ভার্ডের অধ্যাপক আবি এবং তাঁর দুই সহকারী  3I/ATLAS-কে কৃত্রিম ভিনগ্রহী চর বলে উল্লেখ করেছেন। ১৭ জুলাই arXiv-তে নিজেদের গবেষণাপত্র তুলে ধরেছেন আবি, তাঁর দুই সহকারী অ্যাডাম হিবার্ড এবং অ্যাডাম ক্রোল। তাঁদের দাবি, এর আগে যে দু’টি  আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর সন্ধান মেলে, তার চেয়ে 3I/ATLAS ঢের বেশি দ্রতগামী। যেভাবে সৌরজগতে প্রবেশ করতে চলেছে সেটি, তাও আলাদা। ভিনগ্রহের কোনও সভ্যতা সেটিকে সৌরজগতে পাঠিয়েছে নজরদারি চালানো এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য।  

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, 3I/ATLAS সৌরজগতের তিন গ্রহ, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শুক্রের গা ঘেঁষে উড়ে যাবে। নভেম্বরের শেষ দিকে সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করবে। পৃথিবী থেকে মহাকাশে যেমন কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয়, তেমনই সৌরজগে ভিনগ্রহীদের কৃত্রিম উপগ্রহ বয়ে আনছে 3I/ATLAS. মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শুক্রগ্রহের উপর ওই সব উপগ্রহ মোতায়েন করা হবে বলে দাবি তিন বিজ্ঞানীর। 

নভেম্বর মাসেই সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করবে 3I/ATLAS. সেই সময় আর পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না সেটিকে। অধ্যাপক আবির দাবি, “ইচ্ছাকৃত ভাবেই এমন অবস্থান, যাতে পৃথিবীর নজরদারি এড়ানো যায়।” পৃথিবীর নজর এড়াতেই 3I/ATLAS-কে মহাজাগতিক বস্তুর আকার দেওয়া হয়েছে বলে মত তাঁর। শেষ পর্যন্ত 3I/ATLAS যদি ভিনগ্রহী চর হয়, সেক্ষেত্রে ‘ফরেস্ট থিওরি’র সত্যতা নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবে না বলে মত তাঁর। আত্মরক্ষার্থে ভিনগ্রহীরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই দেখা দেয় না, নিজেদের লুকিয়ে রাখে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের এই ধারণাকেই ‘ফরেস্ট থিওরি’ বলা হয়।

আর তাই পৃথিবীর উপর ভিনগ্রহীদের আক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অধ্যাপক আবি। তাঁর মতে, আত্মরক্ষা করার জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে পৃথিবী থেকে কোনও মহাকাশযান পাঠিয়ে  3I/ATLAS-কে পর্যবেক্ষণ করা যাবে না। কারণ সেটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। পৃথিবীর কোনও মহাকাশযান কাছাকাছি পৌঁছনোর অনেক আগেই সেটি সৌরজগত ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। যদিও অধ্যাপক আবির তত্ত্ব নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। 

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ রেজিনার জ্যোতির্বিজ্ঞানী সামান্থা লওলার বলেন, “এখনও পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী,  3I/ATLAS একটি সাধারণ ধূমকেতু। অন্য একটি নক্ষত্রমণ্ডল থেকে ছিটকে এসেছে।” কিন্তু অধ্যাপক আবি নিজের তত্ত্ব একেবারে খারিজ করতে নারাজ।