নয়াদিল্লি: মহাকাশে গবেষণার জগতে আরও একধাপ এগোল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে এবার নভোশ্চর পাঠাচ্ছে তারা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে ISRO. আর সেই অভিযানে 'Prime' নভোশ্চর হিসেবে মহাকাশে উড়ে যাবেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল।মহাকাশে পাঠানোর জন্য এখনও পর্যন্ত যাঁদের বাছাই করেছে ISRO, শুভাংশু তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। (Group Captain Shubhanshu Shukla)


ভারতের জন্য এই অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ 'Prime' নভোশ্চর তিনি হন, যিনি মহাকাশে উড়ে যান। প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য 'Backup' নভোশ্চরও বাছাই করে NASA, যাতে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। অর্থাৎ বসিয়ে রাখা হবে না শুভাংশুকে। আমেরিকার নভোশ্চরদের সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে উড়ে যাবেন। 


শুভাংশুর জন্ম উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে, ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি-র ছাত্র ছিলেন। ২০০৬ সালের ১৭ জুন ভারতীয় বায়ুসেনায় যুদ্ধবিমান বিভাগে যোগ দেন। যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে শুভাংশুর। ২০০০ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। Sukhoi-30MKI, MiG-29, Jaguar, Hawk, AN-32 প্রভৃতি বিমান চালিয়েছেন। (ISRO News)




আরও পড়ুন: Chang'e 5 Moon Water: চাঁদের মাটিতে জল, জ্বালানির উপাদান, হাতেকলমে মিলল প্রমাণ


শুভাংশু যেখানে 'Prime' নভোশ্চর হিসেবে অভিযানে যোগ দিচ্ছেন, গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালাকৃষ্ণণ নায়ারকে 'ব্যাকআপ' হিসেবে রাখা হয়েছে। তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সি নভোশ্চর হতে চলেছেন। ১৯৭৬ সালের ২৬ অগাস্ট কেরলে জন্ম তাঁর। তিনিও ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্য়াকাডেমির ছাত্র ছিলেন। এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমিতে Sword of Honour সম্মানও পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন। (Group Captain Prasanth Balakrishnan Nair)


গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার A ক্যাটেগরির উড়ান প্রশিক্ষক, যা একজন পাইলটের সর্বোচ্চ কৃতিত্ব। ৩০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। Sukhoi-30 MKI, MiG-21, MiG-29, Hawk, Dornier, AN-32 বিমান উড়িয়েছেন। আমেরিকার স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ নেন, ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, আবার তামিলনাড়ুর ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর্স স্কুলের সঙ্গেও যুক্ত। Sukhoi-30MKI স্কোয়াড্রনের নেতৃত্বে ছিলেন একসময়।


ভারত থেকে এখনও পর্যন্ত একজন নভোশ্চরই মহাকাশে গিয়েছেন, উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা। ১৯৮৪ সালে ইন্দো-সোভিয়েত অভিযানে শামিল ছিলেন তিনি। এবার সেই তালিকায় শুভাংশুর নাম শামিল হওয়ার অপেক্ষা। মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুভাংশুকে অভিযানের জন্য বাছাই করে একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ISRO. তাঁদের যুক্তি, ভারতের 'গগনযান' অভিযান একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযান হতে চলেছে। কম বয়সি শুভাংশু মহাকাশ থেকে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরবেন, তা আগামী দিনে গবেষণার কাজে সহায়ক হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদের মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ISRO-র। তার আগে সন্তর্পণে এগোচ্ছে ISRO. 


NASA এবং ISRO-র সঙ্গে Human Space Flight Centre (HSFC) মহাকাশ উড়ান চুক্তি করেছে। সেই চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছবে Axiom-4 মহাকাশযান। Axiom-4 আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে চতুর্থ বেসরকারি অভিযান। সেই অভিযানেই 'গগনযাত্রী' শুভাংশু এবং নায়ারকে বাছাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ISRO. চলতি সপ্তাহ থেকেই তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। গবেষণার কাজ থেকে প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি শেখানো হবে তাঁদের। সেই মতো আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।