নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস রচনা করেছে দেশ। এবার সমুদ্রমন্থনের প্রস্তুতি শুরু হল। চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। 'সমুদ্রযান' অভিযানের আওতায় সাগর-মহাসাগরের নীচে মানুষ পাঠানোর কাজ চলছে। সামুদ্রিক সম্পদ হদিশ পেতে এবং জলের নীচে জীববৈচিত্র নিয়ে সঠিক ধারণা পেতেই এই 'সমুদ্রযান' অভিযান। (Mission Samudrayaan)


কেন্দ্রীয় সরকারের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় 'সমুদ্রযান' অভিযানের আপডেট দেন। মহাসাগরের গর্ভে ভারতের প্রথম মানব-অভিযানের প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে বলে জানান। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X (পূর্বতন ট্যুইটার)-এ সাবমার্সিবল জলযানের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'পরের অভিযান 'সমুদ্রযান'। এটি 'মৎস্য ৬০০০' (Matsya 6000), মহাসাগরের গভীরে ভারতের প্রথম অভিযান। তিন জন মানুষকে মহাসাগরের ৬ কিলোমিটার গভীরে নামানো হবে এই সাবমার্সিবল জলযানে চাপিয়ে, যাতে গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত সম্পদ এবং জীববৈচিত্র নিয়ে গবেষণা চালানো যায়'।


মহাসাগরের গর্ভে এই অভিযান চালানো হলেও, তাতে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানান রিজিজু। তাঁর বক্তব্য, 'মহাসাগরের গভীরের এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'নীল অর্থনীতি' ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে উঠবে সামুদ্রিক সম্পদ, কর্মসংস্থান হবে, জীবন ধারণের মানোন্নয়ন হবে এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষাও সম্ভব হবে'। 'সমুদ্রযান' অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী, গবেষক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ছবিও পোস্ট করেন রিজিজু। সকলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন বলে জানান। এমনকি নিজেও সাবমার্সিবল জলযানের ভিতর প্রবেশ করেন। গভীর সমুদ্রে কী অবস্থায় থাকবে 'মৎস্য ৬০০০', অভিযাত্রীরা কোন উপায়ে নিরাপদে থাকবেন, বিজ্ঞানীদের কাছে বুঝে নেন।



আরও পড়ুন: Science News: হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে বিচরণ ভিন্গ্রহীদের! প্রদর্শনীতে দুই রহস্যজনক মমি, শোরগোল গোটা বিশ্বে


এর আগে, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে 'মৎস্য ৬০০০' একটানা ১২ ঘণ্টা জলের নীচে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৬ ঘণ্টাও জলযানটির মধ্যে সুরক্ষিত থাকবেন অভিযাত্রীরা। 'সমুদ্রযান' অভিযান সম্পূর্ণ হতে এখনও পর্যন্ত ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। চেন্নাইয়ের ন্য়াশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকননোলজি 'মৎস্য ৬০০০' তৈরির দায়িত্বে রয়েছে।


সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত খনিজ এবং সম্পদকে অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার কারই এই অভিযানের লক্ষ্য। সমুদ্রগর্ভ থেকে নিকেল, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ এবং অন্য়ান্য বিরল খনিজ তুলে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখার পাশাপাশি জলের নীচে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে। সমুদ্রের নীচে পর্যটন গড়ে তোলা থেকে সম্পদ নিরীক্ষণ কেন্দ্র করে তোলা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। ৬ হাজার মিটার গভীরতা পর্যন্ত খননকার্য চালানোর বিশেষ যন্ত্র এবং জীববৈচিত্র মূল্যায়নের জন্য বিশেষ স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রও মহাসাগরের নীচে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রের।