মেরিল্যান্ড: মহাজাগতিক বস্তুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রথম চেষ্টাতেই সাফল্য পেল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড বা মহাজাগতিক বস্তুর গ্রাস থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে পরিকল্পিত ভাবে তার উপর মহাকাশযান আছড়ে ফেলা হল। যে কক্ষপথ ধরে ছুটেছিল গ্রহাণুটি (Asteroid), তাতে পৃথিবীর বেশ কাছাকাছি ছিল সেটি। মহাকাশযান আছড়ে ফেলে সেই কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা গিয়েছে গ্রহাণুটিকে। নাসা-র (NASA) এই পরীক্ষামূলক অভিযানই (Planetary Defence Test) মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সফল হল।


মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনল নাসা


সোমবার এই অভিযানের সময় পৃথিবী থেকে ৭০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থান ছিল গ্রহাণুটির। নাসার ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডায়রেকশন টেস্ট (ডার্ট) মহাকাশযান সেটির উপর আছড়ে পড়ে। ১০ মাস আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এই বিশেষ অভিযানের জন্য ডার্ট-কে মহাকাশে পাঠানো হয়। এই সাফল্যের পর নাসা-র তরফে লিখিত বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা হল। গ্রহাণু আছড়ে পড়ার বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করার যোগ্য়তা অর্জন করলাম আমরা’।


ডাইমরফোস নামের ওই গ্রহাণুটি আয়তনে প্রায় ৫৩০ ফুট। মিশরের বৃহদাকার পিরামিডের সঙ্গে তার তুলনা চলে। ডিডিমস নামের আধ মাইল বিস্তৃত নামের একটি অভিভাবক গ্রহাণুকে ঘিরে পাক খাচ্ছিল। ডার্ট আছড়ে পড়ার আগের মুহূর্তে ডাইমরফোসের যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে ডিম্বাকৃতির ওই গ্রহাণুর রুক্ষ্ম, পাথুরে বহিরাবরণ চোখে পড়েছে। ঘণ্টায় ২৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার গতিতে ডাইমরফোসের উপর আছড়ে পড়ে ডার্ট।



আরও পড়ুন: Samsung Credit Card: ভারতে ক্রেডিট কার্ড লঞ্চ করল স্যামসাং, কী কী সুবিধা পাবেন ক্রেতারা?


ডাইমরফোস এবং ডিডিমস, দু’টি গ্রহাণুই প্রতি চার বছর অন্তর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। আপাতত তাদের নিয়ে কোনও ঝুঁকি নেই বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।  বরং ডার্ট আছড়ে পড়ার পর ডাইমরফোস তুলনামূলক ছোট একটি কক্ষপথে গিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। ডার্ট আছড়ে পড়ার আগে ১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে ডাইমরফোসকে একবার প্রদক্ষিণ করত ডাইমরফোস। কক্ষপথ থেকে ছিটকে যেখানে গিয়ে পড়েছে ডাইমরফোস, তাতে আরও ১০ মিনিট বেশি সময় লাগবে বলে আশাবাদী তাঁরা।  


মহাকাশযান আছড়ে পড়ার পর গ্রহাণু দু’টি কোন অবস্থানে রয়েছে, তা জানতে গ্রাউন্ড টেলিস্কোপ ব্যবহার করবেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়াও, ডার্টের সঙ্গে লিসিয়াকিউব নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহও মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।  ডার্ট গ্রহাণুর উপর আছড়ে পড়ার আগে লিসিয়াকিউব তার থেকে আলাদা হয়ে যায়। আগামী কয়েক মাস মহাকাশে ওই দুই গ্রহাণুকে পর্যবেক্ষণ করবে লিসিয়াকিউব। সেই ছবি পাঠাবে নাসা-র বিজ্ঞানীদের। চার বছরের মাথায় ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির তরফেও ওই দুই গ্রহাণুকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ওই দুই গ্রহাণু থেকে সংগৃহীত পদার্থও পৃথিবীতে এসে পৌঁছবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।


মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়া রোখার যোগ্য পৃথিবী


মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে কোটি কোটি গ্রহাণুর, ধূমকেতুর মধ্যে হাতে গোনা কিছু পৃথিবীর কাছাকাছি এসে পড়ে। কোনও ক্রমে পৃথিবীতে তা আছড়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে। ডায়নোসরের অবলুপ্তির জন্যও এমনই গ্রহাণু আছড়ে পড়ার উল্লেখ করেন বিজ্ঞানীরা। তবে আগামী ১০০ বছরে এমন কোনও অঘটনের সম্ভাবনা নেই বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।