নয়াদিল্লি: উপর থেকে দেখলে মনে হয় রাজমা বা শিমের বীজ। মঙ্গলগ্রহের বুকে এমনই বস্তুর সন্ধান মিলল। লালগ্রহের উত্তর গোলার্ধে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে সেগুলিকে। দেখতে হুবহু রাজমার দানার মতো। পৃথিবীর বাইরে প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজতে গিয়ে এই আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, একসময় প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ থাকলেও থাকতে পারে মঙ্গলের বুকে। (Martian Kidney Beans)
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র Mars Reconnaissance Orbiter (MRO) এই আবিষ্কার করেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ওই ছবি তোলা হয়, যা সামনে আনা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। অনেকটা উচ্চতা থেকে তোলা ছবিতে সেগুলিকে রাজা শিমের দানা বলেই ঠাহর হয়। সাদা মাটির উপর যেন গেঁথে রয়েছে সেগুলি। সেগুলি আসলে কী, তার খোলসা করেছেন বিজ্ঞানীরা। (Science News)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গাঢ় বাদামি রংয়ের ওই বস্তুগুলি আসলে বালিয়াড়ি। কিন্তু বালিয়াড়ি স্থান পরিবর্তন করে। ওই বস্তুগুলি কিন্তু স্থির। কিন্তু মঙ্গলের বুকে বালিয়াড়িগুলির একেবারে জমাট বাঁধা অবস্থায়, স্থির হয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আসলে ঠান্ডায়, হিমের সংস্পর্শে এসে জমে গিয়েছে বালিয়াড়িগুলি। উপরিভাগে কার্বন ডাই অক্সাইডের আস্তরণ জমে গিয়েছে। এর ফলে আকারও পাল্টায়নি, একই জায়গায় স্থির রয়েছে।
মঙ্গলের বুকে যে জায়গায় ওই বস্তুগুলি দেখা গিয়েছে, সেটি আসলে মরু অঞ্চল। হিমের পরশ যেহেতু দেখা গিয়েছে, তাই মঙ্গলের বুকে কোনও কালে প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ ছিল কি না, তা নতুন করে ভাবাতে শুরু করেছে বিজ্ঞানীদের। যদিও কার্বন ডাই অক্সাইডের সংস্পর্শেই বালিয়াড়িগুলি জমে গিয়েছে, জলের কোনও দেখা মেলেনি, তাও সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গলের কোথায় কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কত, তা নির্ভর করে সূর্যের থেকে কোন অবস্থানে রয়েছে লালগ্রহটি। নিজের কক্ষপথে কিছুটা হেলেই অবস্থান করে মঙ্গল। এই ঝুঁকে থাকা অবস্থানও পরিবর্তনশীল। কখনও বেশি হেলে থাকে, কখনও আবার কম। যখন বেশি হেলে থাকে, সেই সময় ঋতুর পরিবর্তনে তীব্রতা চোখে পড়ে। সেই সময় কার্বন ডাই অক্সাইড জাত বরফ গ্যাসে পরিণত হয়। বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব আরও পুরু হয়। দীর্ঘ সময় এমন চললে তরল অবস্থায় থাকতে পারে জল।
তাই মঙ্গলের বুকে কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফ কী ভাবে জমে, আবার কী ভাবে গলে যায়, তার উপর নির্ভর করেই অতীতে লালগ্রহের জলবায়ু কেমন ছিল, তা জানার চেষ্টার করছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ সময় যদি লালগ্রহে জল তরল অবস্থায় থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সেখানে প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে থাকতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।