নয়াদিল্লি: টাকা গাছে না ফললেও, সোনা অন্তত ফলে। হাতেকলমে এর প্রমাণ দিলেন বিজ্ঞানীরা। নরওয়ে স্প্রুস গাছ (Norway Spruce Tree), যা ‘ক্রিসমাস ট্রি’ হিসেবেও পরিচিত, তাতেই সোনার খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। স্প্রুস গাছের সূচালো অংশে সোনার কণা পাওয়া গিয়েছে। গত ২৮ অগাস্ট Environmental Microbiome জার্নালে এ নিয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। (Science News)

Continues below advertisement

আপনা থেকেই স্প্রুস গাছে কি সোনা ফলে তাহলে? সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদনের পাশাপাশি, স্প্রুস গাছ কি তাহলে সোনাও ফলায়? এর বিশদ ব্য়াখ্য়া তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ডের উত্তরে যে স্প্রুস গাছ রয়েছে, তাতে সোনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা পাওয়া গিয়েছে।  আসলে স্প্রুস গাছের পাতা এবং সূচালো অংশে এমন অণুজীব বসবাস করে, যারা ওই অংশের রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মাটিতে মিশে থাকা ধাতুকে দ্রবণশীল অবস্থা থেকে সোনার কণায় পরিণত করে সঞ্চিত রাখছে। (Gold Nanoparticles in Spruce Trees)

বিষয়টি অতি সম্প্রতিই বোঝা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এই গোটা প্রক্রিয়াকে Biomineralisation বলে উল্লেখ করেছেন। ফিনল্যান্ডের University of Oulu-র পোস্ট ডক্টোরাল গবেষক কাইসা লেহোসমার বক্তব্য, “রেজাল্ট বলছে, ওই গাছের মধ্যে বসবাসকারী ব্যাকটিরিয়া এবং অন্য অণুজীব সোনা জমা করছে।”

Continues below advertisement

এই গবেষণার ফলে ‘সবুজ সোনা অনুসন্ধানে’র পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।  তাঁদের মতে, জীবাণু দ্বারা পরিচালিত অনুরূপ প্রক্রিয়া চললে, সেক্ষে সোনার খনির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত জলকে ধাতুমুক্ত করার কাজ সহজ হবে আগামী দিনে। 

তাহলে অণুজীব কি গাছে সোনা তৈরি করে? গোড়া থেকে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন যে, খনিজ থেকে আয়ন ঝরে গেলে ব্যাকটিরিয়ার কাজ শুরু হয়। আয়ন মাটিতে মিশে যায় এবং সেই মাটি থেকেই গাছ জল এবং পুষ্টি গ্রহণ করে। ফলে আয়নও শুষে নেয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য়ে গাছে তো বটেই, বরফেও ওই ধাতুর খোঁজ পাওয়া সম্ভব। University of Oulu এবং জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ফিনল্যান্ডের গবেষকরা মূলত পুরনো সোনার খনির উপর বেড়ে ওঠা গাছ নিয়ে পরীক্ষা চালান। তাতেই দেখা গিয়েছে, জলের সঙ্গে গাছের শিকড় হয়ে সোনার কণা গাছের স্প্রুস গাছের সূচালো অংশে জমা হয়েছে।

মোট ২৩টি স্প্রুস গাছ থেকে ১৩৮টি সূচালো অংশ সংগ্রহ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলিকে মাঝ বরাবর কেটে আলাদা আলাদা পরীক্ষা করা হয়। ফিল্ড এমিসন স্ক্যানিং ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কপি এবং এনার্জি ডিসপার্সিভ এক্সরে স্পেক্ট্রোস্কোপির সাহায্য়ে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। উজ্জ্বল, ঘন একটি বিন্দুর খোঁজ মেলে ওই সূচালো অংশের ভিতর। মূলত P3OB-42, Cutibacterium, Corynebacterium ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতি যেখানে, সোনার খনি রয়েছে যেখানে, যেখানকার মাটিতে সোনা মিশে রয়েছে, সেখানেকার স্প্রুস গাছেই মূলত সোনার কণা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মাটিতে উপস্থিত সোনা জলের সঙ্গে দ্রবণশীল অবস্থায়, আয়নের আকারে উঠে আসে। সূচালো অংশের ভিতর অণুজীব রাসায়নিক সমীকরণে যে রদবদল ঘটায়, তার জেরে দ্রবীভূত সোনা কম দ্রবণশীল হয়ে ওঠে। ক্ষুদ্র কণার আকারে জমা হয়। তবে সব গাছেই সোনা থাকে না।