নয়াদিল্লি: কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিল, ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন রোগী। শরীর ভেঙে পড়ছিল ক্রমশ, মানসিক ভাবে হাল ছাড়তে বসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হল তাঁকে। আর তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। দেখা গেল, প্রতিস্থাপনের পর যে কিডনি বসানো হয়, তার দরুণই অসুস্থ পড়ে পড়েছেন ওই ব্যক্তি। কারণ ওই কিডনিতে বাসা বেঁধে ছিল পরজীবী, যা রোগীর শরীরকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলেছে। কোনও রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনলেন চিকিৎসকরা। (Kidney Transplantation)
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন বিষয়টি তুলে ধরেছে। জানা গিয়েছে, ৬১ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ১০ দিনের মধ্যেই শরীর ভেঙে পড়ে ওই ব্যক্তির। শরীরকে গ্রাস করে ক্লান্তি, বমি বমি ভাব লেগে থাকত সারা ক্ষণ। কিছু খাওয়া মাত্রই বমি হয়ে যাচ্ছিল। প্রচুর তেষ্টা পেত যেমন, তেমন ক্ষণে ক্ষণে শৌচাগারেও ছুটতে হতো। যত দিন যেতে থাকে, পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও অস্বাভাবিক রকম কমে যায়। (Medical Science)
সেই অবস্থায় চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বাড়িতেই খেয়াল রাখা হয় ওই রোগীর। কিন্তু পরিস্থিতির এত অবনতি হয় যে, দু’মাসের মাথায় ফের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। ফিডিং টিউবের মাধ্য়মে সেখানে তাঁকে খাওয়ানো শুরু হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি, রক্তচাপ কমতে শুরু করে, ফুসফুস তরলে ভরে যায়। ICU-তে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরিবর্তে, অবনতি হতে শুরু করে। রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। ব়্যাশের মতো লাল-বেগুনি ফুসকুড়িতে ঢেকে যায় তলপেটের অংশ।
সংক্রমণ ঘটেছে বলে বুঝতে পারেন চিকিৎসকরা, কিন্তু কী থেকে সংক্রমণ হল, তা বোঝা যাচ্ছিল না কিছুতেই। ওই রোগীর পরিবারের মেডিক্যাল হিস্ট্রি পর্যন্ত খতিয়ে দেখা হয়। এমনিতে কিডনি প্রতিস্থাপনে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেই। তাই আগে থেকেই প্রচুর ওষুধ খাচ্ছিলেন রোগী। তার পরও সংক্রমণ এমন আকার ধারণ করছে কী করে, বুঝতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। এতে অন্য পন্থা নিতে শুরু করেন চিকিৎসক ক্যামিল কটন।
কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এমন সংক্রমণের নেপথ্যে Strongyloides থাকতে পারে বলে সন্দেহ জাগে চিকিৎসক কটনের। Strongyloides আসলে একধরনের পরজীবী, যা মূলত গৃহপালিত কুকুর বা বিড়ালের শরীরে পাওয়া যায়। ওই পরজীবী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, মস্তিষ্ক, লিভার, ত্বক, পেশি, এমনকি হাড়ের ভিতরেও বাসা বাঁধতে পারে। যে ব্যক্তি কিডনি দান করেছিলেন, তাঁর সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। আর তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। দেখা যায়, কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে ওই ব্যক্তির Strongyloides সংক্রমণ পরীক্ষা হয়নি। এর পর রেকর্ড ঘেঁটে তাঁর রক্তের নমুনা খুঁজে বের করা হয়। নতুন করে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, Strongyloides পরজীবী প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি রয়েছে তাতে। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় যাঁর শরীরে, অস্ত্রোপচারের আগে সেই রোগীর তেমন কোনও সংক্রমণ ছিল না।
এর পর ওই রোগীর ত্বকেও Strongyloides পরজীবীর খোঁজ মেলে। তলপেটের ওই ফসকুড়িও সেখান থেকেই। এর পর শুরু হয় ওই পরজীবীর হামলা থেকে রোগীকে সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া। সেই সময় অন্য একটি হাসপাতাল থেকে খবর এসে পৌঁছয় যে, কিডনিদাতার অন্য একটি কিডনি যাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, তাঁর শরীরেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে দু’জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানা যাচ্ছে। ২০২১ সালের Organ Procurement and Transplantation Network-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি ০.১৪ শতাংশ হলেও, পরজীবীর সংক্রমণ এই নতুন নয়। জানা যায়, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যত সংক্রমণ ধরা পড়ে, তার ৪২ শতাংশই Strongyloides. ২০২৩ সালে United Network for Organ Sharing নিজেদের বিধিতে Strongyloides পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে।