'...বয়ে যায় ঢল ধরে নাকো জল আজি ‘জমজম’ কূপে,
‘সাহারা’ আজিকে উথলিয়া ওঠে অতীত সাগর রূপে
পুরাতন রবি উঠিল না আর সেদিন লজ্জা পেয়ে,
নবীন রবির আলোকে সেদিন বিশ্ব উঠিল ছেয়ে'।
'মরুভাস্কর' কাব্যগ্রন্থের সূচনায় এই পঙক্তিগুলি লিখে গিয়েছিলেন কবি নজরুল ইসলাম। অতীতের সাগর রূপে উথলে না উঠলেও, বর্তমানে সাহারা মরুভূমিতে নয়া অধ্যায়ের সূচনা ঘটছে। প্রকৃতির খেয়ালে ধূ ধূ প্রান্তর মরু সাহারার বুকে সবুজের ঢল নেমেছে। কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে সাহারাকে। প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরণেই রূপ পাল্টে গেল তার। (Sahara Desert Turns Green)
NASA-র Earth Observatory কৃত্রিম উপগ্রহ সাহারা মরুভূমির সবুজ শ্যামল রূপ তুলে ধরেছে সকলের সামনে। অতিক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে সাহারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর তাতেই কার্যত সবুজের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (Climate Change)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গত ৭ এবং ৮ অক্টোবর ভারী বৃষ্টি হয়। এমনকি মরক্কো, আলজিরিয়া, টিউনিশিয়া, লিবিয়ার যে অঞ্চলে বৃষ্টি প্রায় হয়ই না, সেই অঞ্চলগুলি কার্যত ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর তার দৌলতেই জায়গায় জায়গায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সবুজ গাছপালা, ঝোপ-ঝাড়।
বৃষ্টির পর এত দ্রুত রুক্ষ অঞ্চলে গাছপালা গজিয়ে ওঠার নজির নেই। কিন্তু কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া সিলভিয়া ত্রাজাস্কা জানিয়েছেন, তুলনামূলক নীচু এলাকায় গাছপালা গজিয়ে উঠেছে। উডল হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট পিটার ডি মেনোকাল জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি হলে বালির ঢিবি সরে গিয়ে মাটি .বেরিয়ে যায়। সেই সুযোগেই সবুজ গাছপালা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
ইতিহাস বলছে, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা একসময় সবুজ বনভূমি ছিল। ঘন জঙ্গল, হাজার হাজার হ্রদ ছিল সেখানে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল থেকে বর্ষা ক্রমশ দক্ষিণে সরে যেতে শুরু করে, তাতেই ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয় সাহারা। গত ১৩ হাজার বছর ধরে সাহারা মরুভূমি রূপেই বিরাজ করছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রতি ২০ বছর অন্তর সাহারা চরিত্রগত পরিবর্তন ঘটে। মরুভূমি সাভানা তৃণভূমিতে রূপান্তরিত হয়। পৃথিবীর অক্ষে পরিবর্তন ঘটে বলে আবহাওয়ারও পরিবর্তন ঘটে। সেই মতো উত্তর আফ্রিকায় বর্ষার গতিপথও পাল্টায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, এবারে সাহারায় যে সবুজ চোখে পড়ছে, তা অতিক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নেমে আসা ভারী বৃষ্টির প্রভাবেই। কিছু জায়গায় এক ফুট মতো জল জমে গিয়েছে। পৃথিবীর বুকে আফ্রিকার উত্তর অংশই রুক্ষতম। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর মাসে অন্য বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় বন্যাও হয়েছে, তাতে ১৪টি দেশের ৪০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য প্রকল্প বিভাগের। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে তাপমাত্রার ওঠাপড়াও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছে বিজ্ঞানীদের একাংশ।