নয়াদিল্লি: গাছের প্রাণ আছে বলে প্রথম আবিষ্কার করেন বাঙালি বিজ্ঞানী। এবার গাছেদের কথোপকথন ধরা গেল ক্যামেরায়। জাপানের বিজ্ঞানীরা এই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছেন। পাশাপাশি সাজিয়ে রাখ কিছু গাছ যখন নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে ব্যস্ত, তাদের কথোপকথনের ধরন, ভাবভঙ্গি ক্যামেরায় বন্দি করা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বায়ুবাহিত যৌগের সূক্ষ্ম কণাগুলি গাছপালাকে কুয়াশার চাদরে ঢেকে রাখে। সেই যৌগগুলিকে ব্যবহার করেই পরস্পরের সঙ্গে কথোপকথন চালায় গাছেরা। বায়ুবাহিত যৌগগুলি এক্ষেত্রে গন্ধের মতো কাজ করে, যার মাধ্যমে বিপদ সম্পর্কে সতর্কবার্তা যায় গাছেদের কাছে। (Plants Talking to Each Other)


জাপানের একদল বিজ্ঞানী গাছেদের মধ্যেকার কথোপকথনের ভিডিও ক্যামেরায় বন্দি করেছেন। কোন উপায়ে গাছেরা বায়বীয় সতর্কবার্তা গ্রহণ করে এবং তার নিরিখে প্রতিক্রিয়া জানায়, ধরা পড়েছে ভিডিও-তে। জাপানের সাইতামা ইউনিভার্সিটির আণবিক জীববিজ্ঞানী মাসাতসুগু টয়োটা এবং তাঁর সহযোগীরা এই অসাধ্যসাধন করেছেন। নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক ইয়ুরি আরাতানি এবং তাকুইয়া উইমুরাও এই আবিষ্কারে যুক্ত ছিলেন। (Science News)


একটি অক্ষত গাছের উপর পরীক্ষা চালান বিজ্ঞানীরা। পতঙ্গের অত্যাচার এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য একটি গাছ থেকে নির্গত অস্থির জৈব যৌগের প্রেক্ষিতে অক্ষত গাছটি কী প্রতিক্রিয়া জানায়, সেই নিয়ে পরীক্ষা চলছিল। এক গাছের সঙ্গে অন্য গাছের সেই কথোপকথনকে ক্যামেরায় বন্দি করতে বিজ্ঞানীরা একটি বায়ুনিষ্কাশনযন্ত্র ব্যবহার করেন, যা একটি পাত্রে রাখা কিছু টমেটো গাছ ও শুঁয়োপোকা এবং অন্য একটি পাত্রে বাক্সে রাখা আরবিডোপসিস থালিয়ানা, এক প্রজাতির গাঁজা গাছকে সংযুক্ত করে। 



আরও পড়ুন: Snowless Winter in Kashmir: ঠান্ডা আছে, বরফ নেই! এ কেমন কাশ্মীর?


পরীক্ষা চলাকালীন শুঁয়োপোকাগুলিকে টমেটো  গাছের পাতা খেতে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, টমেটো গাছের পাতা থেকে নির্গত বায়বীয় যৌগ থেকে বিপদের সতর্কবার্তা গ্রহণ করছে বিশেষ প্রজাতির ওই গাঁজা গাছে। এর পর পরীক্ষায় একটি বায়োসেন্সর ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা, দুই গাছের পাতার মধ্যেকার কথোপকথন ধরা পড়লে, সেটি উজ্জ্বল সবুজ রংয়ে জ্বলে ওঠে। সেন্সরে ক্যালসিয়াম আয়নও ধরা পড়ে। মানবদেহের কোষগুলিও পরস্পরের মধ্যে কথোপকথন চালাতে ক্যালসিয়ামই ব্যবহার করে। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পাশাপাশি অবস্থিত দুই গাছের মধ্যে কথোপকথন চলে। বিশেষ করে বিপদের সতর্কবার্তা পরস্পরকে পৌঁছে দেয় তারা। পরিবেশে বেড়ে ওঠার সময় এভাবেই পরস্পরকে বিপদ থেকে রক্ষা করে গাছেরা। ওই ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে, আহত গাছটি থেকে সতর্কবার্তা এসে পৌঁছতে ক্যালসিয়াম তরঙ্গের প্রসারণ ঘটছে পাতার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বিজ্ঞানী মাসাতসুগু টয়োটা বলেন, "কখন, কোথায়, কোন পদ্ধতিতে গাছেরা বিপদবার্তা পেয়ে সাড়া দেয় এবং পরস্পরকে সতর্ক করে, সেই জটিলতার অবসান ঘটল।"


ওই দুই গাছের মধ্যে যে বায়বীয় যৌগের আদানপ্রদান হয়, সেগুলি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা Z-3-HAL এবং E-2-HAl নামের দু'টি উপাদানের খোঁজ পেয়েছেন, যারা ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে সঙ্কেত পাঠানোর সহায়ক। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের চোখের সামনেই গাছেরা পরস্পরের সঙ্গে কথোপকথন চালায়। কিন্তু খালি চোখে তা দেখা যায় না। লজ্জাবতী গাছেও ক্যালসিয়াম সঙ্কেত ব্যবহার করেই শিকারিদের হাত থেকে বাঁছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।