নয়াদিল্লি: সকলের অগোচরে চাঁদের উল্টোপিঠে কি কিছু ঘটছে? পৃথিবীর উপগ্রহে পর পর আলোর ঝলকানি, বিস্ফোরণের দৃশ্য ধরা পড়ায় নতুন করে এমন প্রশ্নই মাথাচাড়া  দিচ্ছে।  গত সপ্তাহেই দু’-দু’বার চাঁদের অন্ধকার দিকটিতে আলোর ঝলকানি, বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গিয়েছে। পৃথিবীতে বসেই সেই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করেছেন জাপানের এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। সেই ভিডিও ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (Explosions on Moon)

Continues below advertisement

পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদকে নিয়ে কৌতূহলের সীমা নেই এমনিতেই। পৃথিবীর বাইরে প্রথম মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্র হিসেবেও তাই বেছে নেওয়া হয় চাঁদকেই। চাঁদ, জ্যোৎস্না রাত নিয়ে কবিতা, গানেরও কমতি নেই গোটা পৃথিবীতে। কিন্তু পৃথিবী থেকে আপাত দৃষ্টিতে যে স্নিগ্ধ উপস্থিতি চাঁদের, বাস্তবের সঙ্গে তার যে বিস্তর ফারাক, তা ফের বোঝা গেল নয়া ভিডিও সামনে আসতে। (Science News)

গত সপ্তাহে টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদের উপর চোখ রাখা হয়েছিল, আর তাতেই দু’-দু’বার চাঁদের রুপোলি চাঁদের বুকে কিছু আছড়ে পড়তে দেখা গেল। প্রথম ভিডিওটি সামনে আসে গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে। দ্বিতীয়টি সামনে আসে সপ্তাহান্তে। জাপানের Hiratsuka City Museum-এর কিউরেটর, জ্যোতির্বিজ্ঞানী Daichi Fujii ওই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। 

Continues below advertisement

নিজের টেলিস্কোপ তাক করে চাঁদের উপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন Daichi. প্রথমে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা বেজে ৩৩ মিনিটে চাঁদের অন্ধকার দিকে বিস্ফোরণের দরুণ আলোর ঝলকানি দেখতে পান তিনি। এর পর, গত শনিবার রাত ৮টা বেজে ৪৯ মিনিটে ফের উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি চোখে পড়ে তাঁর। তবে এর নেপথ্য়ে কোনও রহস্য নেই বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, তাঁদের অন্ধকার দিকে গ্রহাণু আছড়ে পড়াতেই বিস্ফোরণ ঘটে। সেই আলোর ঝলকানিই দেখতে পান Daichi. 

পৃথিবীর মতো চাঁদের বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের জেরে গ্রহাণুর গতি শ্লথ হয় না। বরং তীব্র বেগে, ঘণ্টায় প্রায় ৬০০০০ মাইল গতিতে সেগুলি চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ে। পৃথিবীতে যে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলি রয়েছে, তার থেকে ওই সব গ্রহাণুর গতিবেগ ৩০ গুণ বেশি হয়। সম্প্রতি যে দুই বিস্ফোরণ ঘটে চাঁদের বুকে, সেক্ষেত্রে গ্রহাণু দু’টির আকার কেমন ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ছোটখাটো গ্রহাণু থেকেও বড় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, যা পৃথিবী থেকেও দেখা যেতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।

তবে এই ধরনের ঘটনা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদের মাটিতে কত ঘন ঘন গ্রহাণু আছড়ে পড়ে, তা বোঝার কাজ আরও সহজ হবে। আশেপাশে আরও বড় গ্রহাণু রয়েছে কি না, আমাদের পৃথিবীর উপর কোনও বিপদ নেমে আসতে পারে কি না, সেই  নিয়েও গবেষণার কাজ সহজ হবে আরও। Daichi একজন মহাকাশপ্রেমী। রাতের আকাশে নজরদারি চালানো তাঁর নেশা। জাপানের ফুজি এবং হিরাৎসুকায় দু’টি টেলিস্কোপ বসিয়ে রেখেছেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত চাঁদের বুকে এমন ৬০টি ঘটনাকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন তিনি। 

Daichi জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার চাঁদের বুকে যে বিস্ফোরণ ঘটে, তার অবস্থান ছিল Gassendi গহ্বর থেকে ৭০ মাইল দূরে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে Oceanus Procellarum গহ্বরের পশ্চিমে, ১৬০০ মাইল সমতল অংশে, যেখানে ম্যাগমা স্ফটিকের আকারে জমে রয়েছে। তবে অনেক সময় আলোর ঝলকানি বিভ্রম বলেও প্রমাণিত হয়।  তাই ওই ভিডিও-র সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র কাজকর্ম এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের তরফে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির চোখে এমন কিছু ধরা পড়েনি। কারণ ওই সময় ইউরোপের আকাশে চাঁদ অতি উজ্জ্বল রূপে ধরা দিচ্ছিল। তবে জাপানের আরও একাধিক টেলিস্কোপে ওই দৃশ্য ধরা পড়েছে। ফলে চাঁদের বুকে গ্রহাণু আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা জোরাল হয়ে উঠছে।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির Near Earth Coordination Centre-এর এ্যরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হুয়ান লুই কানো নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আলোর ঝলকানি আসল বলেই ঠাহর হচ্ছে। আমার নজর কেড়েছে একটি বিষয়, দুই ক্ষেত্রেই আলোর ঝলকানির আকার সাধারণের তুলনায় বেশি।” কোন গ্রহাণু চাঁদের বুকে আছড়ে পড়েছে, তা স্পষ্ট ভাবে জানা যাচ্ছে না। তবে Daichi-র মতে, Taurid উল্কাবৃষ্টি চলাকালীন কোনও উল্কা আছড়ে পড়ে থাকবে চাঁদের বুকে।