নয়াদিল্লি: মাত্র আটদিনের অভিযানে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু মহাকাশে ন’মাসের নির্বাসন কাটাতে হয় তাঁদের। সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহযাত্রী ব্যারি ‘বুচ’ উইলমোর যদিও নিরাপদেই ফিরেছিলেন পৃথিবীতে। তবে এবার আরও বড় ঘটনা ঘটে গেল মহাকাশে। মহাকাশে আটকে পড়লে চিনের তিন মহাকাশচারী। তাঁদের মহাকাশযানের সঙ্গে জোর ধাক্কা লাগে মহাজাগতিক আবর্জনার। আর তাতেই সেখানে আটকে পড়লেন তাঁরা। (Chinese Stranded Astronauts)
চিনের তিন মহাকাশচারী, Chen Dong, Dhen Zhongrui এবং Wang Jie মহাকাশে আটকে পড়েছেন। গত ছ’মাস ধরে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তাঁরা। চিনের নিজস্ব স্পেস স্টেশন, Tiangong থেকে গত সপ্তাহেই পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তাঁদের মহাকাশযান Shenzhou 20-র সঙ্গে জোর ধাক্কা লাগে মহাজাগতিক আবর্জনার। আর তাতেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। নেমে এসেছে ঘোর বিপদ। (Chinese Stranded Astronauts)
ওই তিন মহাকাশচারী কেমন আছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার China Manned Space Engineering Office যে বিবৃতি দেয়, তাতেও স্পষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনামাফিকই এগোচ্ছে কাজ। Tiangong স্পেস স্টেশনে এই মুহূর্তে রয়েছেন তিন মহাকাশচারী। Shenzhou 21 মহাকাশযান শীঘ্রই রওনা দেবে। পৃথিবী থেকে তিন মহাকাশচারীকে সেখানে রেখে, আটকে পড়া তিনজনকে ফিরিয়ে আনা হবে শীঘ্রই।
Shenzhou 20 মহাকাশযানটিকে মেরামত করতে অন্য একটি রকেট পাঠানো হতে পারে বলে খবর। Shenzhou 22 মহাকাশযানের অভিযানও এগিয়ে আনা হয়েছে।
কিন্তু এই দুর্ঘটনা ঘটল কী করে? অস্ট্রেলিয়ান স্পেস আর্কিওলজিস্ট এবং মহাজাগতিক আবর্জনা বিশেষজ্ঞ অ্যালিস গরম্যান Bloomberg-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, মহাজাগতিক আবর্জনা যে বিপদ বাড়িয়ে তুলছে, সেব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। NASA-র স্পেস শাটল প্রোগ্রামের সময় থেকেই বিপদ বোঝা যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের ক্ষেত্রেও বিপদ একেবারে শিয়রে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। এবার বড় কিছু ঘটল।
গরম্যান জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মহাজাগতিক আবর্জনা থেকে অন্তত ৩০ বার পিছু হটতে হয়েছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে। চিন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সহযোগী নয়। ২০২২ সালে তারা নিজেদের স্পেস স্টেশন Tiangong-এর সূচনা করে। তবে তার কক্ষপথও আন্তর্জাতির স্পেস স্টেশনের মতোই। ঝুঁকি সমান।
মহাজাগতিক আবর্জনা বলতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহ, রকেটের স্টেজ, দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষকে বোঝায়, যা মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেগুলির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মহাকাশে। আবার সেগুলি পৃথিবীতে আছড়ে পড়়লেও মারাত্মক কিছু ঘটতে পারে। এযাবৎ একাধিক ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও, এই প্রথম এত বড় কিছু ঘটল।
আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। বিশেষ করে চিনকেই কাঠগড়ায় তুলছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, মহাকাশে আবর্জনাবৃদ্ধির জন্য চিনের দায় কিছু কম নয়। ২০০৭ সালে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে মহাকাশে নিজেদেরই একটি কৃত্রিম উপগ্রহ চুরমার করে ফেলে বেজি, যা থেকে সবচেয়ে বেশি মহাজাগতিক আবর্জনার সৃষ্টি হয়। ৩৫০০০-এর বেশি মহাজাগতিক আবর্জনা সৃষ্টি হয় সেই সময়। মহাজাগতিক আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য NASA-র তরফে সম্প্রতি বিশেষ উদ্যোগও দেখা যায়। তবে কাজ শুরু হয়নি আজও।