নয়াদিল্লি: বিশ্ব উষ্ণায়নের দোসর জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে উপকুল অঞ্চলগুলি তলিয়ে যেতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই থেকে আন্টার্কটিকার উপর নজরদারি চলছিল। সেখানকার বরফের চাদর কতটা গলছে, তার ফলে কী বিপদ হতে পারে, লাগাতার হিসেব নিকেশ কষছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু যা কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা, অন্তর্তদন্তে এবার সেই বিপদের কথাই উঠে এল। জানা গেল, আন্টার্কটিকার বরফের চাদরের তলদেশে মারাত্মক ঘটনা ঘটছে, যাতে সলিল সমাধি ঘটতে পারে গোটা পৃথিবীর। (Antarctic Ice Sheet Melting)


British Antarctic Survey আন্টার্কটিকায় গবেষণা করতে গিয়ে সমূহ বিপদের কথা জানতে পেরেছে। মঙ্গলবার Nature Geoscience জার্নালে সেই তথ্য তুলে ধরেছে তারা। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে এতদিন নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা আসন্ন বিপদ আঁচ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল না। আসল সমস্যা ধরা পড়েছে সম্প্রতি, যা গোটা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। (Science News: British Antarctic Survey)


British Antarctic Survey-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আন্টার্কটিকার বরফের চাদর গলতে শুরু করেছে, যা সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে এতদিন জানা যাচ্ছিল। কিন্তু সকলের অগোচরে রয়ে গিয়েছিল অন্য একটি বিষয়, যা হল সমুদ্র, সাগর-মহাসাগরের উষ্ণ জল সটান গিয়ে আন্টার্কটিকার বরফের চাদরের নীচে জমা হচ্ছে। 


আরও পড়ুন: International Space Station: আয়ু ফুরোচ্ছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের, ধাক্কা দিয়ে ফেলা হবে মহাসাগরে, বরাত পেলেন ইলন মাস্ক


এর ফলে আরও দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করেছে আন্টার্কটিকার বরফের চাদর। কারণ উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ছিল উপর উপর। আর উষ্ণ জল গিয়ে একেবারে গোড়ায় ধাক্কা মারছে, যার ফল হতে পারে মারাত্মক। বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে আন্টার্কটিকা কার্যতই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ছোট  ছোট কিছু পরিবর্তনই গোটা পৃথিবীর নকশা পাল্টে দিতে পারে, যেখান থেকে আর ফেরার উপায় থাকবে না। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ জল একেবারে তলদেশ হয়ে আন্টার্কটিকার বরফের চাদরের নীচে ঢুকে যাচ্ছে। এর ফলে, বরফের চাদরের নীচে ছোট ছোট গর্ত এবং ফাটল তৈরি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সেই গর্ত এবং ফাটল আরও বড় হবে। সেই ফাটল এবং গর্ত দিয়ে উষ্ণ জল বরফের চাদরের আরও ভিতরে ঢুকে পড়বে।   এর ফলে, আরও বেশি পরিমাণ বরফ, আরও দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করবে। 


সাগর-মহাসাগরের তাপমাত্রা যদি সামান্যও বৃদ্ধি পায়, আন্টার্কটিকার বরফের চাদরের উপর তার প্রভাব হবে ব্যাপক। British Antarctic Survey-র আইস ডাইনামিক্স বিভাগের বিজ্ঞানী অ্যালেক্স ব্র্যাডলির কথায়, “এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা। যে কোনও মুহূর্তে সব কিছু পাল্টে যেতে পারে। কত পরিমাণ বরফ গলছে, তাও পাল্টে যেতে পারে নিমেষে।” কারণ যত দ্রুত বরফ গলবে, তত দ্রুত সেই বরফ এবং বরফ গলা জল গিয়ে মিশবে সাগর-মহাসাগরে। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এতদিন এই বিষয়টিকে ধরাই হয়নি বলে জানিয়েছেন অ্যালেক্স। ফলে এতদিন সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির যে হিসেব নিকেশ করছিলেন, সমূহ বিপদ আঁচ করতে পারেনি বলে দাবি তাঁর। 


গবেষণাপত্র অনুযায়ী, অবিলম্বে এই বিপদ বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু আগামী দিনে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির গতি আরও ত্বরাণ্বিত হতে পারে। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র যত উপকূল অঞ্চল রয়েছে, সেগুলি ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। ঠিক কবে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে, তার দিনক্ষণ যদিও নির্দিষ্ট করে জানাননি বিজ্ঞানীরা। তবে এখনও আন্টার্কটিকা যে ভাল নেই, তা স্পষ্ট। কারণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫০০০ কোটি মেট্রিক টন বরফ ঝেড়ে ফেলে আন্টার্কটিকা। সেই নিরিখে সামগ্রিক ভাবে সমুদ্রের জলস্তর ১৯০ ফুট বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার।


জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে এমনিতেই আন্টার্কটিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন গবেষকরা। বিশেষ করে আন্টার্কটিকার পশ্চিম ভাগে যে Thwaites Glacier রয়েছে, যাকে বিনাশকারী হিমবাহ বলেও উল্লেখ করা হয়, সেটি চিন্তা বাড়িয়েছে সকলের। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিতে সেটির বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নয়া গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র একটি হিমবাহ নয়, সাগর-মহাসাগরে উষ্ণ জল ঢুকে গোটা আন্টার্কটিকার বরফের চাদরেই ভাঙন ধরাতে পারে। তাই আন্টার্কটিকা নিয়ে গবেষণায় আরও জোর দেওয়া উচিত বলে মত অ্যালেক্সের। সমুদ্রের জলের সামান্যতম উষ্ণতাবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের গতিত সামান্যতম ত্বরাণ্বিত হওয়াও কাম্য নয় বলে মত তাঁর।