নয়াদিল্লি: প্রযুক্তিগত ত্রুটির জেরে মহাকাশে আটকে গিয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি বুচ উইলমোর। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযানে চাপিয়ে কেন দুই নভোশ্চরকে পাঠানো হল,  সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. আর সেই আবহেই NASA-র কাছ থেকে বড় বরাত পেলেন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা SpaceX-এর মালিক ইলন মাস্ক। (International Space Station)


তৃতীয় মহাকাশ অভিযানে বেরিয়ে এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেও পা রাখেন সুনীতা। ব্যারিও সেখানে মোতায়েন নভোশ্চরদের সঙ্গে দেখা করেন। এই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন মহাকাশ গবেষণার ভরকেন্দ্র। একাধিক দেশ সেটি ব্যবহার করে। কিন্তু শীঘ্রই সেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কার্যকাল শেষ হতে চলেছে। সেটিকে নামিয়ে আনার বরাত পেলেন মাস্ক। (Elon Musk)


আন্তর্জাতিক মহাকাশযানটিকে কক্ষপথ থেকে টেনে নামাতে বিশেষ একটি যান তৈরি করবে মাস্কের সংস্থা। গোটা বিষয়টিতে তদারকির দায়িত্বে থাকছে NASA. সব মিলিয়ে মাস্কের সংস্থার সঙ্গে তাদের ৮৪৩ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮৪ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের বেশি। বুধবার এই চুক্তির কথা জানাল NASA.


আরও পড়ুন: Space Debris in Florida: তিন তলা বাড়ির ছাদ, মাঝের দুই তলার মেঝে ফুঁড়ে মাটিতে, মহাকাশ থেকে আছড়ে পড়ল বর্জ্য, NASA-র বিরুদ্ধে মামলা


NASA-র পরিকল্পনা অনুযায়ী, SpaceX-এর তৈরি যানটি মহাকাশে গিয়ে ৪৩০ টনের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষপথ থেকে সরাবে। তবে মহাজাগতিক বর্জ্য হিসেবে সেটিকে মহাকাশে ফেলে রেখে আসা হবে না। বরং টেনে নামিয়ে আনা হবে প্রশান্ত মহাসাগরে। আগামী দশকের গোড়ার দিকে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গিয়েছে। 


১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের একটি অংশ প্রথম মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৪ সাল থেকে সেখানে গিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন নভোশ্চররা। ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে প্রতি ৯০ মিনিটে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এখনও পর্যন্ত মহাকাশ গবেষণার অধিকাংশ কাজই সেখানে সম্পন্ন হয়েছে। মহাকাশে নয়া উপাদানের খোঁজ থেকে সেখানে সবজি ফলানো, মানুষের বয়সবৃদ্ধির প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা, এমন হাজারো গবেষণা হয়েছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। 


NASA-র ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের ল্যাবরেটরিটি এখনও পর্যন্ত একেবারে যথাযথ অবস্থায় কাজ করছে। কিন্তু এখন থেকেই ভবিষ্যতের কথা ভাবা জরুরি। সেটিকে নামিয়ে আনতেই হবে, আর তাতে অন্যের সাহায্য দরকার।  নইলে আপনা থেকেই পৃথিবীতে নেমে আসবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটি। কিন্তু তাতে পৃথিবীবাসীর বিপদ হতে পারে। তাই সেটিকে কক্ষ্যপতচ্যুত করতে বিশেষ যান প্রয়োজন।


বর্তমানে আমেরিকা এবং রাশিয়াই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের নেতৃত্বে রয়েছে। ইউরোপ, কানাডা এবং জাপান সহযোগীর ভূমিকায়। রাশিয়া জানিয়েছে, কমপক্ষে ২০২৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে তারা। বাকিরাও ২০৩০ সাল পর্যন্ত যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে। মাস্কের সংস্থার হাতে সেটিকে নামানোর দায়িত্ব সঁপে NASA মহাকাশ অভিযানের বাণিজ্যিকরণের পথ আরও প্রশস্ত করল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


এখনও পর্যন্ত যা খবর, প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে পয়েন্ট নিমো-তে নামিয়ে আনা হবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে। কল্পবিজ্ঞান গল্পের লেখক জুলস ভার্নের ‘20000 Leagues Under the Sea’ বইয়ের মুখ্য চরিত্রের নামে। সবচেয়ে নিকট স্থলভাগের থেকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পয়েন্ট নিমো। মহাজাগতিক বর্জ্যের সমাধিক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সেটি।