কলকাতা: দিনভর শরতের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল। রাত হতেই গ্রহণ লাগল চাঁদে। একটু একটু করে পৃথিবীর ছায়া পড়তে শুরু করে উপগ্রহের উপর। রাত ১১টা বেজে ১ মিনিটেই পৃথিবীর ছায়ায় পুরোপুরি ঢেকে যায় চাঁদ, যা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হিসেবে গণ্য হয়। একই সঙ্গে রক্তবর্ণ আকার ধারণ করছে চাঁদ। পূর্ব গোলার্ধের দেশগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে চাঁদের এই রূপ। কলকাতার আকাশেও দৃশ্যমান পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ও রক্তাভ চাঁদ। (Lunar Eclipse News)
রবিবার রাত ৯টা বেজে ৫৭ মিনিটে চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া পড়তে শুরু করে। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায় রাত ঠিক ১১টা বেজে ১ মিনিটে। রাত ১২টা বেজে ২২ মিনিটে কেটে যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। পূর্ণিমার চাঁদে সচরাচর গ্রহণ লাগে না। পাশাপাশি, রক্তবর্ণ চাঁদ দেখতেও বাড়তি উৎসাহ চোখে পড়ছে, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Blood Moon. ভারতের বিভিন্ন শহরেই গ্রহণ দেখতে খোলা আকাশের নীচে জড়ো হয়েছেন মানুষজন। (Total Lunar Eclipse)
চলতি বছরের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহণ এটি। পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধ যেহেতপ সবচেয়ে জনবহুল, আর সেখানকার আকাশেই যেহেতু এই গ্রহণ ঘটবে, ফলে প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ এই মুহূর্তের সাক্ষী হবেন। পূর্ণিমার চাঁদে গ্রহণও সচরাচর লাগে না। বছরে মাত্র দু’-তিনবারই ঘটে, যা পৃথিবীর মাত্র অর্ধেক জনসংখ্যারই চোখে পড়ে।
পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্য এবং চাঁদের মাঝে অবস্থান করে পৃথিবী। ফলে পৃথিবীর ছায়া সরাসরি চন্দ্রপৃষ্ঠের উপর পড়ে। আর সেই কারণেই রুপোলি রং রক্তাভ বলে মনে হয়। আসলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে যখন সূর্যালোক এগোয়, তার তরঙ্গ বেঁকে যায এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে নীল রংয়ের পরিবর্তে লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যই ঊজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় চোখে। তবে গ্রহণের সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থা অনুযায়ী এই রংয়ে হেরফের ঘটে। এই রং রক্তাভ, কমলা বা ইঁটের মতোও মনে হতে পারে।
এবারে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাল ভাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাচ্ছে এশিয়ার দেশগুলি এবং অস্ট্রেলিয়া। ভারতের আকাশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে রাত ১১টা বেজে ১ মিনিট থেকে ১২টা বেজে ২৩ মিনিট পর্যন্ত। NASA জানিয়েছে, ২.২৫ নাগাদ পুরোপুরি শেষ হবে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দীর্ঘ ৮২ মিনিট ধরে চলবে গ্রহণ।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যগ্রহণও রয়েছে আগামী ২১ তারিখে। তবে সূর্যগ্রহণের মতো পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ ধরনের চশমার দরকার নেই। শুধু আকাশ অন্ধকার এবং পরিষ্কার থাকলেই হল। ভাল স্মার্টফোন এবং ক্যামেরায় ছবিও তোলা যায়। বাইনোকুলার, ছোট টেলিস্কোপও ব্যবহার করতে পারেন। চাঁদের বুকের গহ্বর, পাহাড়-পর্বতগুলিকে দেখা যায়।
এবারের গ্রহণের সময় চাঁদের কাছাকাছি দু'টি গ্রহেরও দর্শন মিলছে কিছু জায়গা থেকে। চাঁদের গা ঘেঁষে ঊজ্জ্বল হলুদ রংয়ের যে বিন্দু দেখা যাচ্ছে, তা হল শনি। টেলিস্কোপ থাকলে শনির বলও দেখতে পাবেন। অন্য দিকে, হালকা নীল ও সবুজ মেশানো বিন্দু দেখতে পেলে বুঝবেন সেটি নেপচুন। তবে আকাশ পরিষ্কার থাকলে, টেলিস্কোপ থাকলে তবেই দেখতে পাবেন।