নয়াদিল্লি: উৎসবের মরশুমে বিরল মহাজাগতিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছেন পৃথিবীবাসী। ৭-৮ সেপ্টেম্বর রাতে আকাশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে যেমন, তেমনই রাতের আকাশে দৃশ্যমান হবে শনিও। বলয় সহকারে একেবারে পূর্ণরূপে মানুষের চোখে ধরা দেবে সেটি। সাধারণ টেলিস্কোপের সাহায্য়েই দেখা যাবে শনিকে। শুধু তাই নয়, আকাশ পরিষ্কার থাকলে হালকা নীল রংয়ের একটি বিন্দুও দেখতে পাবেন, যা সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ, নেপচুন। (Total Lunar Eclipse)
চলতি সেপ্টেম্বর মাসকে ‘গ্রহণের মাস’ বললেও অত্যূক্তি হয় না। কারণ চন্দ্রগ্রহণই নয় শুধুমাত্র, এমাসে সূর্যগ্রহণও রয়েছে। তবে আপাতত পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে। রবি-সোমের রাতে আকাশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এটি অন্যতম দীর্ঘ চন্দ্রগ্রহণও হতে চলেছে, যা মোট ৮২ মিনিট স্থায়ী হবে। তবে আমেরিকার মতো দেশ থেকে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে না। পূর্ব গোলার্ধের লোকজনই শুধু দেখতে পাবেন। (Science News)
চলতি বছরের দ্বিতীয় চন্দ্রগ্রহ হতে চলেছে এটি। সবচেয়ে জনবহুল, পূর্ব গোলার্ধের আকাশে যেহেতু এই গ্রহণ ঘটবে, ফলে প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ সেটি চাক্ষুষ করতে পারবেন। এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্য এবং চাঁদের মাঝে অবস্থান করবে পৃথিবী। ফলে পৃথিবীর ছায়া সরাসরি চন্দ্রপৃষ্ঠের উপর পড়বে, যার দরুণ রুপোলি রং রক্তাভ বর্ণে পরিণত হবে এবং রাতের আকাশে রক্তাভ চাঁদ দেখতে পাবেন পৃথিবীবাসী। পূর্ণিমার চাঁদে গ্রহণ সচরাচর লাগে না। বছরে মাত্র দু’-তিনবারই ঘটে, যা পৃথিবীর মাত্র অর্ধেক জনসংখ্যারই চোখে পড়ে।
রক্তাভ বর্ণের এই চাঁদকে ইংরেজিতে ‘Blood Moon’ও বলা হয়। এক্ষেত্রে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে যে সূর্যালোক এগোবে, তার তরঙ্গ বেঁকে যাবে এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে পড়বে। নীল রংয়ের পরিবর্তে লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যই ঊজ্জ্বল হয়ে ধরা দেবে চোখে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যেমন থাকবে, সেই নিরিখে এই রং কমলা বা ইঁটের মতো লালও মনে হতে পারে। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাল ভাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পাবে এশিয়ার দেশগুলি এবং অস্ট্রেলিয়া। ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে সূর্যাস্তের পর দেখা যাবে। ভারতের আকাশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে রবিবার রাত ১১টা বেজে ১ মিনিট থেকে ১২টা বেজে ২৩ মিনিট পর্যন্ত। ২.২৫ নাগাদ শেষ হবে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ।
এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ ধরনের চশমার দরকার নেই। শুধু আকাশ অন্ধকার এবং পরিষ্কার থাকলেই হল। ভাল স্মার্টফোন এবং ক্যামেরায় ছবিও তোলা যাবে। বাইনোকুলার, ছোট টেলিস্কোপও ব্যবহার করতে পারেন। চাঁদের বুকের গহ্বর, পাহাড়-পর্বতগুলিকে দেখা যাবে সেক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, এই দীর্ঘ ৮২ মিনিট সময়কালে চাঁদের গা ঘেঁষে ঊজ্জ্বল হলুদ একটি বিন্দু দেখতে পাওয়া যাবে, যা আসলে শনি। টেলিস্কোপের সাহায্য়ে তার বলয়ও দেখা যাবে। পাশাপাশি, হালকা নীল ও সবুজ মেশানো বিন্দু দেখতে পেলে বুঝবেন সেটি নেপচুন। এর পর ২১ সেপ্টেম্বর আবার আংশিক সূর্যগ্রহণও রয়েছে।