ওয়াশিংটন: মঙ্গলে মানুষ পাঠানো থেকে ভারতের রাস্তায় টেসলা নামানোর ঘোষণা, পদে পদে চমক সৃষ্টি করেন তিনি। ফের একবার খবরের শিরোনামে টেসলা কর্তা, বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি ইলন মাস্ক (Elon Musk)। এবার পরীক্ষামূলক ভাবে মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম সঞ্চালন যন্ত্র বসানোর ছাড়পত্র পেল তাঁর মস্তিষ্ক-প্রতিস্থাপন সংস্থা 'নিউরালিঙ্ক' (Brain-Chip)। গত সপ্তাহেই আমেরিকা সরকারের অনুমোদন মিলেছে (Neuralink)।
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) মাস্কের সংস্থাকে পরীক্ষামূলক ভাবে মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম সঞ্চালন যন্ত্র বসানোর ছাড়পত্র দিয়েছে। 'নিউরালিঙ্ক'-এর দাবি, দৃষ্টিশক্তি ফেরানো, মস্তিষ্ক, স্নায়ু এবং পেশির সংযুক্তিকরণ এবং সর্বোপরি কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্ককে জুড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বিজ্ঞানের। সেই কাজকে বাস্তবায়িত করে দেখাতে চায় তারা।
এই মস্তিষ্ক সঞ্চালন যন্ত্র আসলে অত্য়াধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এক ধরনের মাইক্রোচিপ। সেটি ব্যবহার করে পক্ষাঘাত থেকে অন্ধত্ব দূর করা, শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী যাঁরা, কম্পিউটার এবং মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য মাস্কের সংস্থার।
বাঁদরের মস্তিষ্কে ইতিমধ্যেই ওই মাইক্রোচিপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে। ওই মাইক্রোচিপ এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, মস্তিষ্কে উৎপন্ন সঙ্কেত ব্লুটুথের মাধ্যমে মাইক্রোচিপে প্রেরিত হবে। মাস্ক ছাড়াও বিশ্বের হাতেগোনা কিছু সংস্থা মস্তিষ্কে কৃত্রিম সঞ্চালম যন্ত্র বসানোর কাজে হাত দিয়েছে। সম্প্রতি তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্যও পেয়েছে সুইৎজারল্যান্ডের গবেষকরা। তার আওতায়, নেদারল্যান্ডের এক ব্যক্তি দুর্ঘটনায় হাঁটার শক্তি হারিয়েছিলেন। মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু বিজ্ঞানীদের তৈরি করা যন্ত্রের সাহায্য ফের উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি, চলাফেরাও করতে পারছেন।
আরও পড়ুন: Quasi Moon: শুরু থেকেই ন্যাওটা, একসঙ্গেই ঘোরাফেরা, পৃথিবীর আরও একটি আধা উপগ্রহের হদিশ মিলল
এ ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল রোবটের সাহায্যে মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করা হয় ওই যন্ত্রটিকে। তাতের মস্তিষ্কের সমস্ত সঙ্কেত রেকর্ড হয়ে যায়। কোনও রকম তার ছাড়াই তা ক্রমে সঞ্চারিত হয় ওই ব্যক্তির পায়ে এবং পায়ের পাতায়। অর্থাৎ মস্তিষ্ক হাঁটার কথা বলছে, সেই অনুযায়ী চলছে ওই ব্যক্তির পা।
মাস্কের সংস্থা 'নিউরালিঙ্ক'-কে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে যদিও নানা মত রয়েছে। এর আগে, বিভিন্ন মহল থেকেই আপত্তি শোনা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত ছিল, আগে এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হওয়া দরকার। প্রযুক্তিগত তো বটেই, নীতিগত ভাবেও সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে। শুধু তাই নয়, 'নিউরালিঙ্ক'-এর মালিক মাস্ক বলেই চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে, এমন মন্তব্যও শোনা যায়। কারণ ট্যুইটারের মালিকানা হোক বা স্পেস এক্স, সাম্প্রতিক কালে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মাস্ককে। মস্তিষ্ক সঞ্চালন যন্ত্র শুধুমত্র কোনও যন্ত্র বা গেজেট নয়, এর সঙ্গে নৈতিক দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতাও জড়িয়ে, তাই অনুমোদন দেওয়ার আগে আরও ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করছেন অনেকে।
যদিও এর আগে, মাস্ক জানিয়েছিলেন, বর্তমানে গোটা বিশ্বে প্রযুক্তির রমরমা চলছে। Artificial Intelligence বা কৃত্রিম মেধার বাড়বাড়ন্তে মানবজাতির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী দিনে প্রযুক্তির দাসত্ব করতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্রেন-মাইক্রোচিপ মানুষের সহায়ক হতে পারে। FDA ছাড়পত্র পাওয়ার পর 'নিউরালিঙ্ক' জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েই কাজ করবে তারা। মানুষের নিরাপত্তা, উপলব্ধি এবং বিশ্বাসযোগ্যতাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।
২০১৬ সাল থেকেই এই মাইক্রোচিপের সপক্ষে সওয়াল করছিলেন মাস্ক। ২০২০ সালের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কে তা প্রতিস্থাপন সম্ভব হবে বলে অনুমান ছিল তাঁর। তার পর ২০২২ সালের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়। গতবছর ডিসেম্বরে আরও বিপাকে পড়ে তারা। বাঁদরের মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনে পশুকল্য়াণ বিভাগের কোপে পড়ে তারা। নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
তবে FDA অনুমোদন পেলেও, এখনই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হচ্ছে না। অতীত থেকে শিক্ষা পেয়ে এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না মাস্ক। কারণ এর আগে মাস্কের সংস্থার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল FDA. মার্চ মাসে সে নিয়ে বিশদে খবরও ছাপা হয়। তবে গত সপ্তাহে শেষ মেশ তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে FDA-র তরফেও জানানো হয়েছে।