নয়াদিল্লি: ঠান্ডা হোক পৃথিবী, কথাগুলিকে আক্ষরিক অর্থেই ধরে নিয়েছিলেন 'ওঁরা'। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। পৃথিবীর তাপ কমাতে তাই সূর্যালোকের বেশ কিছুটা মহাশূন্যে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। 'ওঁরা' মানে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের একদল গবেষক। এই জন্য 'ক্লাউড ব্রাইটেনিং' (Cloud Brightening) নামে একটি কৌশল অনুসরণ করেন তাঁরা।


বিশদ...
পৃথিবীর ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। সার্বিক ভাবে বিশ্বজুড়ে গরমের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই গবেষকদের এই উদ্যোগ। ঠিক কী করা হয়েছে এতে? গত ২ এপ্রিল, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের গবেষকরা একটি বরফের-মেশিনের মতো যন্ত্র থেকে লবণজাতীয় পদার্থের কণা আকাশে ছুড়ে দেন। তবে এলোপাথারি ছোড়া নয়, নির্দিষ্ট গতিবেগ মেনে আকাশে ছোড়া হয়েছিল কণাগুলিকে। এবং এই জন্য ওই যন্ত্র বসানো হয় সান ফ্রান্সিসকোয় থাকা একটি 'ডিকমিশনড এয়ারক্রাফট' -র মাথায়। তবে গোটাটাই গোপনে করা হয়। CAARE বা 'Coastal Atmospheric Aerosol Research and Engagement' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চালানো এই পরীক্ষাটি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন বিজ্ঞানীরা। একটি শীর্ষস্থানীয় মার্কিন দৈনিক বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পর থেকে হইচই শুরু হয়।


পুরনো 'থিম'?
বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ জন লাথামের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে। লাথামের মতে, মেঘকে আয়নার মতো ব্যবহার করলে সূর্যের আলোর  প্রতিফলন সম্ভব। নিজের তত্ত্বের সূত্র ধরেই তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াবে এমন ১ হাজারটি জাহাজের ব্যবস্থা করা হোক। এই জাহাজগুলি সমুদ্রের জলের কণা আকাশে 'স্প্রে' করবে যা সূর্যের আলো এবং তাপ ফিরিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে কিছুটা শান্ত করবে। এই পদ্ধতির নেপথ্যে থাকা বিজ্ঞানটি এমনিতে সহজ। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অল্প সংখ্যক বড় কণার তুলনায় বেশি সংখ্যক ছোট কণা অনেক বেশি সূর্যালোকের প্রতিফলন করতে পারে। তাই একঝাঁক এই রকম কণা আকাশে ছুড়ে দিতে পারলে উদ্দেশ্যসাধন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। কণার আয়তন এবং সংখ্যা যেন পর্যাপ্ত হয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলতে গেলে, মানুষের একটি চুল গড়ে যতটুকু পুরু, তার ১৭০০ ভাগের ১ ভাগ হবে এই কণার আয়তন। প্রত্যেক সেকেন্ডে, এমন আয়তনের দশ হাজার কোটি কণা আকাশে ছুড়ে দিতে হবে। অন্তত পরীক্ষার জন্য তাই করা হয়েছিল বলে খবর। 
এই পরীক্ষার ফল সফল হলে, বিজ্ঞানীদের আশা, বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো সমস্যা কমানোর একটি পথ পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মহাসাগরগুলির নানা প্রান্তে এমন মেশিন বসিয়ে প্রায়শই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জলস্তরের সার্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনাও সম্ভব হতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে পরীক্ষার ফলাফলের উপর।


আরও পড়ুন:ভূগর্ভেই লুকিয়ে আস্ত মহাসাগর? জলের উৎস নিয়ে মতভেদ আজও