নয়াদিল্লি: পৃথিবীর বাইরে অন্যত্র প্রাণ এবং প্রাণধারণের উপযোগী পরিবেশের সন্ধান চলছে। কিন্তু এই পৃথিবীরই অনেক কিছু এখনও অজানা আমাদের কাছে। এক দশক আগে পৃথিবীকে নিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, পৃথিবীর অন্তঃস্থলে, ভূগর্ভের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার গভীরে আস্ত একটি মহাসাগর রয়েছে। আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগর-সহ পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর যত সাগর-মহাসাগর রয়েছে, তার চেয়ে ভূগর্ভস্থ ওই মহাসাগর প্রায় তিন গুণ বেশি বড় বলে জানানো হয়। (Underground Gigantic Ocean)


২০১৪ সালে ‘Dehydration Melting at the top of the lower mantle’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয়, ভূগর্ভে রিংউডাইট নামের এক ধরনের শিলা রয়েছে। উচ্চচাপের কারণে ওই শিলার খাঁজে খাঁজেই আটকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জলরাশি। তবে তরল অবস্থায় নেই ওই জলরাশি। ওই বিপুল পরিমাণ জলরাশি হাইড্রক্সাইড এবং হাইড্রক্সিল আয়ন হিসেবে ভূগর্ভে অবস্থান করছে। এতদিন পর সেই গবেষণাপত্রটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। (Science News)


ভূমিকম্পের কার্যকারণ নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে ওই বিপুল জলরাশির সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, ভূগর্ভ থেকে সিসমোমিটারে শকওয়েভ ধরা পড়ছে। আমেরিকার ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক স্টিভেন জেকবসন জানান, পৃথিবীতে জল যে ভূগর্ভ থেকেও এসে থাকতে পারে, এই গবেষণা তার প্রমাণ। এত বছর ধরে পৃথিবীতে সাগর-মহাসাগরগুলির আয়তন একই থাকার নেপথ্যেও ভূগর্ভস্থ ওই জলরাশির ভূমিকা রয়েছে বলে মত তাঁর।


স্টিভেন জানান, স্ফটিকের মতো দেখতে, নীল রঙের রিংউডাইট শিলার আচরণ খানিকটা স্পঞ্জের মতো। জল শুষে নেয় ওই শিলা। হাইড্রোজেন এবং জল ওই শিলার ভিতরে আটকে পড়ে থাকে। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় মোট ২০০০ সিসমোগ্রাফ নামিয়ে ৫০০-র বেশি ভূমিকম্পের তরঙ্গ পরখ করে দেখেন তাঁরা। জলের সংস্পর্শে এসে ভূমিকম্পের তরঙ্গের গতি শ্লথ হয়ে যায় বলে জানা যায় গবেষণায়। রিংউডাইট শিলার মধ্যে থাকা জলরাশির জন্যই তা সম্ভব হয় বলে জানা যায়।


উল্কাখণ্ড বা গ্রহাণু আছড়ে পড়েই পৃথিবীতে জলের আগমন ঘটে বলে মনে করেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী। কিন্তু মহাজগত থেকে আছড়ে পড়ে উল্কা বা গ্রহাণুই যে জলের একমাত্র উৎস নয়, পৃথিবীর অন্তঃস্থলে মজুত জলেরও সাগর-মহাসাগর গড়ে ওঠার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বলে মত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। তাঁদের এই দাবি যদি সঠিক হয়, তাহলে পৃথিবীরপ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।