নয়াদিল্লি: প্রয়াত বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী রাজাগোপাল চিদম্বরম। ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মুম্বইয়ের জসলোক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। শনিবার সেখানেই মৃত্যু হয় বিজ্ঞানীর। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটোনমিক এনার্জি (DAE)। ভারতের পরমাণু অস্ত্রপরীক্ষার অন্যতম রূপকারও ছিলেন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল। (Rajagopala Chidambaram Dies)


১৯৭৪ এবং ১৯৯৮ সালে পোখরানে ভারত যে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল। ভারতের অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য 'পদ্ম বিভূষণ' সম্মান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল।
পরিচিত মহলে তাঁকে নিয়ে হইচই হলেও, বিজ্ঞানী রাজাগোপাল বরাবরই মিতভাষী ছিলেন। আদ্যোপান্ত ভদ্রলোক, বিচক্ষণ মানুষ। দশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তাঁর নজরদারি এড়িয়ে কোনও খবর বাইরে বেরোতে পারত না। (Rajagopala Chidambaram Demise)


১৮৭৪ সালে 'অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধ' কোডনেমের আওতায় পোখরানে প্রথম বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে ভারত। সেই পরীক্ষায় সবকিছু তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল। তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন দেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। ১৯৯৮ সালে পোথরানে দ্বিতীয় বার যখন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে ভারত, তাতেও নকশা তৈরি থেকে পরীক্ষা সাফল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। 



বিজ্ঞানী রাজাগোপালের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'ডঃ রাজাগোপালের প্রয়াণে ব্যথিত। ভাপতের পরমাণু প্রকল্পের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুখ ছিলেন তিনি। ওঁর অবদানে বিজ্ঞান এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে ভারতের জমি মজবুত হয়েছে। ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞ গোটা দেশ। ওঁর প্রচেষ্টা আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রেরণা জোগাবে'।


DAE-র সেক্রেটারি অজিতকুমার মোহান্তি বলেন, "ডঃ চিদম্বরম বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির চূড়ামণি ছিলেন। ভারতের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার নেপথ্যে তাঁর অবদান রয়েছে।  ওঁর প্রয়াণে বিজ্ঞান জগৎ এবং গোটা দেশের ক্ষতি হল।"


১৯৭৪ সালে গোপনে প্লুটোনিয়াম আমদানি করে ভারত, যা পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যবহৃত হয়। জানা যায়, মুম্বই থেকে পোখরান নিয়ে যাওয়ার সময় যে বাক্সে প্লুটোনিয়াম বল রাখা ছিল, তার উপর বসে পড়েন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল। পোখরানে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য 'শান্তিপূর্ণ পরমাণু বিস্ফোরণ' শব্দবন্ধের বক্তাও তিনি। পোখরানে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় যুক্ত থাকায় বিজ্ঞানী রাজাগোপালকে ভিসা দেয়নি আমেরিকা। পরমাণু বিভাগের প্রধান হিসেবে তাঁর আমলেই ফের পোখরানে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করা হয়। সেই সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর একেবারেই পাশে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। 


আমদানিকৃত প্রযুক্তির ঘোর বিরোধী ছিলেন বিজ্ঞানী রাজাগোপাল। তাঁর যুক্তি ছিল, কোনও দেশই নিজেদের গোপন তথ্য ফাঁস করতে চাইবে না। ফলে বিদেশ থেকে শুধুমাত্র সেকেলে প্রযুক্তিই পাওয়া সম্ভব। এর পরিবর্তে ভারতকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে হবে বলে জানান।