কলকাতা: সচরাচর ঘটে না বলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘিরে এই মুহূর্তে উৎসাহ চারিদিকে। সৌরজগতের আর কোথাও উপগ্রহ সূর্যকে ঢেকে দেয় বলে নজির নেই। তাই বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনাকে ঘিরে আগাগোড়াই আগ্রহ সকলের। সূর্যগ্রহণের সময় কিছু মুহূর্তের জন্য অন্ধকার নেমে আসে পৃথিবীতে, পশুপাখিদেরও আচরণে পরিবর্তন ঘটে তাতে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও গ্রহণের প্রভাপ বেশ লক্ষণীয়। (Cloud Cover in Solar Eclipse)


সূর্যগ্রহণের সময় বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তর অর্থাৎ আয়নোস্ফিয়ার থেকে গায়েব হয়ে যায় মেঘের পুঞ্জ। বার বার, একাধিক বার এই ঘটনা চোখে পড়েছে বিজ্ঞানীদের। বিষয়টি নিয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর, তাতে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা পরিবেশকে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (Science News)


পূর্ণগ্রাস না হলেও, বছরে বেশ কয়েক বার সূর্যগ্রহণ ঘটে। গ্রহণের সময় বায়ুমণ্ডলে ঠিক কী পরিবর্তন ঘটে, সেই নিয়ে গবেষণা করছিলেন নেদারল্যান্ডসের Delft University of Technology-র ভূবিজ্ঞানী ভিক্টর জে এইচ ট্রিজ এবং তাঁর সহকর্মীরা। ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর দ্য এক্সপ্লয়টেশন অফ মিটিওরোলজিক্যাল স্যাটেলাইটস থেকে প্রাপ্ত তথ্য় খতিয়ে দেখছিলেন তাঁরা, তাতে গ্রহণের সময় মেঘের আচরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে।


আরও পড়ুন: Solar Eclipse 2024: ৫০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ ৮ এপ্রিল, দেখা যাবে কোন কোন এলাকা থেকে?


২০০৫ সালে গ্রহণের সময়কার তথ্য হাতে পান বিজ্ঞানীরা। সেই অনুযায়ী দক্ষিণ সুদানের ঠিক উপরে, ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বিস্তৃত চতুর্ভুজাকার একটি জায়গাকে শনাক্ত করা হয়।  দেখা যায়, গ্রহণের জেরে বেশ কয়েক ঘণ্টা সেখানে মেঘরাশির আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। গ্রহণের সময় এবং গ্রহণ কেটে যাওয়ার বেশ কিছু সময় পর পর্যন্ত ওই অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহণের সময় যখন তমসাচ্ছন্ন ছিল চারপাশ, সেই সময় বায়ুমণ্ডলের নীচের দিকের মেঘরাশির আচরণ অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। সূর্যের ১৫ শতাংশ যখন ঢাকা পড়ে, সেই সময় থেকেই মেঘরাশি পাতলা হতে শুরু করে। তার পর বেশ খানিক ক্ষণ মেঘশূন্য হয়ে যায় বায়ুমণ্ডলের ওই অংশ। গ্রহণ কেটে যাওয়ার প্রায় ৫০ মিনিট পর থেকে আবারও আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করে মেঘরাশি।


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অমনি দিনে আকাশের ৪০ শতাংশ অংশ যেখানে মেঘে ঢাকা থাকে, গ্রহণের সময় ঢাকা থাকে মাত্র ১০ শতাংশ অংশ। এর কারণ হিসেবে যে ব্যাখ্যা উঠে এসেছে, তা হল, চাঁদ সূর্যকে ঢেকে ফেলায় সেই সময় পৃথিবীতে সরাসরি এসে পড়তে বাধা পায় সূর্যরশ্মি। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একধাক্কায় অনেকটা নেমে যায়। এর ফলেই গায়েব হয়ে যায় মেঘরাশি। 


ভূপৃষ্ঠ থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ, উষ্ণ বাতাস উপরে উঠে ঠান্ডা হয়েই মেঘের সৃষ্টি করে। গ্রহণের সম ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যেহেতু কমে যায়, ফলে ,সম পরিমাণ উষ্ণ বাতাস উপরে পৌঁছতে পারে না। জোগানে ঘাটতি দেখা দেওয়াতেই মেঘরাশি পাতলা হতে শুরু করে বলে মত বিজ্ঞানীদের। বাতাস যে অতি দ্রুত উপরে পৌঁছয়, এই পরীক্ষায় তা-ও প্রমাণিত হল বলে মত তাঁদের।