নয়াদিল্লি: নেপাল হোক বা আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তান, পড়শি দেশে ভূমিকম্প হলে কনম্পন অনুভূত হয় রাজধানী দিল্লিতেও। আশেপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে। শুক্রবার রাতে ৬.৪ তীব্রতায় নেপালে ভূমিকম্পের পরও সেই রেশ বজায় ছিল। গত একমাসে এই নিয়ে তৃতীয় বার কেঁপে উঠল দিল্লি। কিন্তু কেন ঘটে এমন, এর নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত কার্যকারণ। (Delhi Tremors)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকা চতুর্থ জোনের মধ্যে পড়ে (Zone IV)। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস সিসমিক জোনিং ম্যাপের আওতায় দিল্লি এবং সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে এই অঞ্চলে। (Delhi Earthquake Prone)
ভৌগলিক অবস্থান এবং ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে রাখা হয়েছে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকাকে। কারণ উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা থেকে দিল্লির দূরত্ব ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে। ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক পাতের মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষের জেরেই এই হিমালয় পর্বতমালা গড়ে উঠেছিল।
সে কোটি কোটি বছর আগের ঘটনা হলেও, মাটির নীচে থাকা পাতগুলি একেবারে স্থির হয়ে গিয়েছে, এমন ধারণা ভুল। বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটলেও মাঝেমধ্যেই সেগুলি নড়াচড়া করে। তার জের হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশ এবং সংলগ্ন দেশগুলিতে কম্পন অনুভূত হয়, ধসও নামে।
সাধারণত, ভূত্বকের উপরিস্তরেই এই পাতগুলি নড়াচড়া করে। তাই পাতগুলি যত সক্রিয় হয়ে ওঠে, ততই ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে পাতের অবস্থানের উপরই সেখানকার স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান পাতের মধ্যে হালকা ঠোকাঠুকি লাগলেও দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়। কারণ যে জায়গায় ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান পাতের মধ্যে ঠোকাঠুকি লাগে, তার সীমানা হিসেবে চিহ্নিত দিল্লি এবং সংলগ্ন অঞ্চল।
দিল্লি যদিও দুই পাতের সংযোগস্থল বা পাতের চ্যুতির উপর অবস্থিত নয়, কিন্তু হিমালয় পর্বতমালার সঙ্গে দূরত্বের নিরিখে ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যেই পড়ে। হিমালয়ের আরও কাছাকাছি হওয়ায় নেপাল, উত্তরাখণ্ডে কম্পনের তীব্রতা বেশি হয়, যা সর্বোচ্চ ৮.৫ পর্যন্তও হতে পারে। নেপাল, উত্তরাখণ্ড তাই পঞ্চম জোনের (Zone V) মধ্যে পড়ে। সেখানে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
দিল্লির বুকে উতিউতি গজিয়ে ওঠা নির্মাণকার্যকেও অনেক সময় ঘন ঘন কম্পনের জন্য দায়ী করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিন্যস্ত ভাবে দিল্লির বুকে গগনচুম্বী সব বিল্ডিং গজিয়ে উঠেছে। যমুনার তীরও বাদ যায়নি। পুরাতন দিল্লিতে বেআইনি ভাবেই কলোনির পর কলোনি গজিয়ে উঠেছে। ঘনবসতি গড়ে উঠেছে ওই সব জায়গায়। ভবিষ্যতে ওই সব এলাকায় তীব্র ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে ক্ষয়ক্ষতিও মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। যে কারণে বিপর্যয় নেমে এলে কোন উপায়ে তার মোকাবিলা সম্ভব, এখন থেকে মক ড্রিল চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।