নয়াদিল্লি: চাঁদের বুকে একের পর এক অভিযান চলছেই। কিন্তু সব অভিযান সফল হয় না। মাটি ছুঁতে সফল হলেও, জাপানের Smart Lander for Investigating Moon (Slim) সম্প্রতি চাঁদের মুখে উল্টো হয়ে অবতরণ করে। দীর্ঘ পাঁচ দশক পর বৃহস্পতিবার চাঁদের বুকে অবতরণ করেছে আমেরিকা। তাদের বেসরকারি সংস্থার চন্দ্রযান Nova-C-ও কাত হয়ে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে। সোজা হয়ে এখনও দাঁড়াতে পারেনি সেখানে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতি সত্ত্বেও, এত বছর পরও চাঁদের মাটি ছোঁয়া কঠিনতর হয়ে উঠছে কেন, তার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। (Lunar Missions)
সরকারি টাকায় চাঁদের বুকে এতদিন যত অভিযান চালানো হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশই এখনও পর্যন্ত সফল ভাবে চাঁদের বুকে অবতরণে সফল হয়েছে, আমেরিকা, রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), চিন, ভারত এবং জাপান। বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে বৃহস্পতিবারই প্রথম সাফল্য পেয়েছে আমেরিকার Intuitive Machines. মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বহু দেশকে, উড়ানের পর চরম পরিণতিও হয়েছে একাধিক বার। (Lunar Mission Failures)
বারং বার এই ব্যর্থতার জন্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাবকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। মেলবোর্নে ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পদার্থ এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কাসাবা পালোতাই জানিয়েছেন, আজকের দিনে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে বটে। সাতের দশকে কম্পিউটার যত শক্তিশালী ছিল, আজকের স্মার্টফোন তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু সাতের দশক থেকে দীর্ঘ সময় মানব অভিযান ঘটেনি। চাঁদের বুকে গত পাঁচ দশকে কোনও মহাকাশচারীর পা পড়েনি। ল্যান্ডার নিয়ে নামেননি কোনও পাইলট। ফলে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কম। কম্পিউটারের হিসেব নিকেশে ভুল ধরানোরও কেউ নেই তাই।
আরও পড়ুন: Nova-C Lander: হোঁচট খেয়ে কাত হয়ে গেল Nova-C, পাঁচ দশক পর চাঁদে ফিরেও সাফল্য বিস্বাদ ঠেকছে আমেরিকার
পাশাপাশি, মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। মহাকাশ অভিযানে কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরিবর্তে সাশ্রয়ী রাস্তা খুঁজছে বড় বড় সংস্থাগুলি। Astrobiotic Technology সংস্থার মহাকাশযান Peregrien Lunar Lander এমনই স্বল্পমূল্যের মহাকাশযান ছিল। গত ৮ জানুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয় সেটি। কিন্তু মাহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের সময়ই বিপত্তি দেখা দেয়। প্রথমে সৌর প্যানেলে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়, উৎক্ষেপণের পর আবার জ্বালানি চুঁইয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। বুস্টার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পরই জ্বালানি চুঁইয়ে পড়তে থাকে বলে সামনে আসে। এর পরই পালকের মতো চাংদের মাটি ছোঁয়ার লক্ষ্যে ইতি পড়ে। ফিরে এসে পৃথিবীতে দেহত্যাগ করে সেটি।
তাই প্রযুক্তি যতই উন্নত হয়ে উঠুক না কেন, মহাকাশচারীরা রকেটে সওয়ার থাকুন বা না থাকুন, চাঁদের বুকে অবতরণ সবসময়ই কঠিন বলেও মত বিজ্ঞানীদের। পৃথিবীর মতো চাঁদের কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। তাই মহাকাশযান হোক বা প্যারাস্যুট, গতি কমিয়ে আনার উপায় নেই। সবকিছু নির্ভর করে জ্বালানি নির্ভর প্রোপালসন সিস্টেমের উপর। সেকেন্ডে কত কিলোমিটার গতি রাখলে, নির্দিষ্ট সময়ে নিরাপদে অবতরণ সম্ভব হবে, সেই সম্পর্কে সুর্দিষ্ট ধারণা থাকে না।
আমেরিকার অ্যাপোলো অভিযানের মাধ্যমেই প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে পদার্পণ সম্ভব হয়। তবে সেই সাফল্য পেতেও দেরি হয়েছে। বার বার ব্যর্থতা সয়ে তার পরই সফল হয় অভিযান। উৎক্ষেপণের পর পর বিস্ফোরণ থেকে গতিপথ নির্ধারণে সমস্যা, সমস্যা ছিল একাধিক। এমনকি ঐতিহাসিক অ্যাপোলা-১১ অভিযানও কম দুঃসাধ্য চিল না। ওই অভিযানে গিয়েই চাঁদের বুকে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন। কিন্তু চাঁদের অবতরণ করার আগে জ্বালানি একধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়। বার বার বিপদ সঙ্কেত বাজতে থাকে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র সাহায্যপ্রাপ্ত ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের নেটওয়র্ক ফর এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স বিভাগের ডিরেক্টর জ্যাক বার্নসের বক্তব্য, "ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ওই অভিযানগুলি সফল হয়েছিল। একথা অনেকেই ভুলে যান। চাঁদে পদার্পণ সহজ নয়, তবে একেবারে অসম্ভবও নয়।" তিনি জানিয়েছেন, সেই সময় যাঁরা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকে বেঁচেই নেই।আজ। মহাকাশ গবেষণার জগৎ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন অনেকে। সেই প্রযুক্তিও আর নেই। সব কিছু নতুন। তাই তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপায় নেই। ফলে এখন যাঁরা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, ব্যর্থতা থেকেই শিক্ষা নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে গোটা বিষয়টিই সময়সাপেক্ষ। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।