নয়াদিল্লি: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার। মাউন্ট এভারেস্টের দখলে তাই পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের শিরোপা। কিন্তু চিরকাল কি এই শিরোপা ধরে রাখতে পারবে মাউন্ট এভারেস্ট? না কি বয়সের ভারে, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে নুয়ে পড়বে তার শরীর? এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কী বলছেন জানুন। (Tallest Mountain in the World)


মাটির নীচে দুই পাতের সংঘর্ষের ফলে সুউচ্চ পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টি হয়। একটি পাত অন্যটির নীচে চলেছে যায়। এর ফলে অন্যটি উপরের দিকে উঠে যায়। সেই থেকেই মোটামুটি সুউচ্চ পর্বতগুলির সৃষ্টির। হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টিও ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান পাতের সংঘর্ষের ফলে। (Tallest Mountain in the World)


স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ আবেডিনের ভূতত্ত্ববিদ রব বাটলার জানিয়েছেন, পাতের সংঘর্ষের ফলে যে পর্বতগুলির সৃষ্টি হয়, তার উচ্চতার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকে। মাটির আবরণ কতটা পুরু, তাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এর উপরই নির্ভর করে তীব্রতা এবং উচ্চতা নির্ভর করে। তাপমাত্রা নির্ভর করে পাতের বয়সের উপর। তবে মাটির আবরণ বলতে এখানে এখানে শক্তপোক্ত চাঙড় হয় না। বরং চটচটে অবস্থাকে বোঝানো হয়। তাপমাত্রা কম হলে এই স্তর বেশ থকথকে এবং দৃঢ় হবে, যা থেকে বেশি উচ্চতার পর্বতের সৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রা বেশি হলে আবরণ হবে পাতলা। উচ্চতা ধরে রাখা যাবে না।


পর্বতের উচ্চতার ক্ষেত্রে ভূমিক্ষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কোটি কোটি বছর আগে কোশী নদী এবং অরুণ নদী পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। প্রচুর পরিমাণ পাথর, মাটি সরে দিয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হয়।  ওজন কমে যায় ভূত্বকের। ওই শূন্যস্থান পূরণে নীচের অংশের মাটি উপরের দিকে উঠে আসে, ঠিক মালপত্র তুলে নিলে নৌকা যেমন জলের উপরে উঠে আসে। এর ফলে এভারেস্ট-সহ হিমালয়ের উচ্চতা আজও বেড়ে চলেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় আইসোস্টেসি। 


ভূমিক্ষয়ের জেরে শুধুমাত্র প্রবতের উচ্চতা বৃদ্ধিই হয় না, সঙ্কোচনও ঘটে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূতত্ত্ববিদ ম্যাথু ফক্স জানিয়েছেন, ভূমির ক্ষয় এবং উত্থানের মধ্যে কতটা ভারসাম্য থাকছে, এক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষয়ের চেয়ে ভূমির উত্থানের হার বেশি হলে, পর্বতের উচ্চতা বাড়বে। আবার উত্থানের চেয়ে ক্ষয়ের হার বেশি হলে কমবে উচ্চতা। পৃথিবীর নবম সর্বোচ্চ উচ্চ শৃঙ্গ 'নঙ্গা পর্বত' দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। এই গতিতে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে একদিন সেটি এভারেস্টকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু আদৌ তা হবে কি না সেই নিয়ে সন্দিহান বিজ্ঞানীরা। কারণ মূলত ভূমিক্ষয়ের ফলেই উচ্চতা বাড়ছে 'নঙ্গা পর্বত'-এর। তাই ভবিষ্যতে তার সঙ্কোচন ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। তুলনায় এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির হার অনেকটা স্থিতিশীল জায়গায় রয়েছে। ফলে দুই পর্বতের মধ্যে ৬১০ মিটারের ব্যবধান বজায় থাকছে।


তবে হিমালয় পর্বতমালার অন্য কোনও শৃঙ্গ এভারেস্টকে ছাডপিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের একাংশের। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি, হিমালয়ের নীচে অবস্থিত টেকটোনিক পাতগুলির সক্রিয়তাকে এর জন্য দায়ী করছেন তাঁরা। আগামী ১ কোটি বছর তারা সক্রিয় থাকবে। ফলে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতেই পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এভারেস্টকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বাটলার। তাঁর মতে, তীব্র এবং দীর্ঘময়াদি সংঘর্ষের ফলেই হিমালয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এভারেস্টের যে উচ্চতা, তা সংঘর্ষের ফলে আটকে পডডা আবরণের জেরেই। নড়াচড়ার জায়গা নেই চারপাশে। আগামী কয়েকশো বছরে অন্তত এমন কিছু ফের ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পাশাপাশি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও রয়েছে। তাই নিকট ভবিষ্যতে এভারেস্টের শিরোপা হারানোর ভয় নেই বলে মত তাঁর।